গত ১৭ সেপ্টেম্বর দিনে দুপুরে বাঘা থানাধীন বাউসা ইউনিয়নের দীঘা বাজারে নিজ সাইকেল রিক্সার গ্যারেজে নির্মমভাবে খুন হয়েছিলেন সাইকেল মেকানিক খাকছার আলী(৫২) । ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার দেহ থেকে মাথা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তার রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল নিজ ছোট প্রতিষ্ঠানটি। নিভৃত পল্লীর এমন নৃশংস ঘটনায় এলাকাবাসী স্তম্ভিত হয়ে যায়।
ঘটনার পরদিন পুলিশ সুপার রাজশাহী জনাব সাইফুর রহমান পিপিএম তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দ্রুততম সময়ে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা প্রদান করেন। মামলা দায়েরের পর তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) নিয়োজিত হন বাঘা থানার পরিদর্শক তদন্ত জনাব সবুজ রানা। জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তার সাথে ছিলেন।
তদন্তে নেমে সবাই হতবাক হয়ে যায়। নিহত ব্যক্তির জ্ঞাত কোন শত্রু নেই, নেই কোন ব্যবসায়ীক প্রতিদ্বন্দ্বী। পারিবারিক বিরোধ, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের কোনো তথ্যও পাওয়া গেলো না। সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় ছিল ভর দুপুরে হাটের দিনে খুন হলেও নেই কোন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী । প্রথাগত তদন্তের পাশাপাশি তথ্য প্রযক্তি নিয়ে অনেক কাজ করা হলো। সম্ভাব্য সকল বিষয় বিশ্লেষণ করেও কিছুই পাওয়া যাচ্ছিল না। তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং তার তদারককারীদের উপর প্রচ্ছন্ন চাপ বেড়ে যাচ্ছিল।
এভাবে প্রায় তিন সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পর একটু আশার আলো দেখা যায়। আইও তার বিশ্বস্ত সোর্সের মাধ্যমে জানতে পারেন ঘটনার পর থেকে নিহত ব্যক্তির প্রতিবেশি আবীর (২০) পিতাঃ আসাদুল ইসলাম গ্রামঃ দীঘা নামে একটা ছেলের আচরণ সন্দেহজনক। যেহেতু কোনো ক্লু ই পাওয়া যাচ্ছে না , আইও এটা নিয়েই কাজ শুরু করেন। গতকাল রাতে তাকে বাঘা থানায় আনা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে কোনো কিছুই স্বীকার করে না।পুলিশ সুপার স্যারের নির্দেশনায় জেলার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও জিজ্ঞাসাবাদে যোগ দেন। রাত বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে সমন্বিত জিজ্ঞসাবাদের চাপ। এক পর্যায়ে সে মুখ খুলতে শুরু করে। কিন্তু প্রথম পর্যায়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের টিমকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে।
কিন্তু টিমের সদস্যরা ততক্ষণে বুঝে গেছেন ঘটনায় সে জড়িত। তারাও হাল ছাড়ার পাত্র না, লেগে থাকলেন। এক পর্যায়ে আবীর পুরো ঘটনার বর্ণনা দিল যা পারিপার্শ্বিকতার সাথে হুবহু মিলে গেলো। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় ঘটনার দিন দুপুর সাড়ে বারটার দিকে সে ঘাস কাটার জন্য হাসুয়া নিয়ে বের হয়ে খাকছারের দোকানে যায়। খাকছার তখন দোকানে একাই ছিলেন এবং নিজের জন্য পান বানাচ্ছিলেন, পাশেই বিকট শব্দে করাত কল চলছিল। পাড়া সম্পর্কে দাদা খাকছারের কাছে সে ১০০ টাকা চায়, কিন্তু সে টাকা না দিয়ে গালি দেয়। এতে ক্রোধান্বিত হয়ে আবীর হাতে থাকা হাসুয়া দিয়ে খাকছারের ঘাড়ে সজোরে একটি কোপ মারে, এতে তখনই তার মৃত্যু হয়। পাশে করাত কলের শব্দের কারনে কেউ শুনতে পায়নি। সে হাসুয়া নিয়েই বাজারের পিছন দিয়ে ঘাস কাটতে চলে যায়।
আজ (৭/১০/২০২৩) বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব লিটন হোসেনের আদালতে সে নিজেকে জড়িয়ে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।
ক্লু লেস খুনের ঘটনা এর পূর্বেও রাজশাহী জেলা পুলিশের সদস্যরা উদ্ঘাটন করেছেন কিন্তু এটা একটা ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। এই তদন্তে তথ্য প্রযুক্তি প্রয়োগের কোনো সুযোগ ছিল না । সম্পূর্ণ ম্যানুয়াল, প্রথাগত পদ্ধতি ব্যবহার করে এমন একটা নৃশংস খুনের রহস্য উন্মোচন করা হলো।