এ দিকে আবহাওয়া অধিদফতরের ১৯ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (১৯.২° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১.৮° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে।

উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র মূল কেন্দ্র কক্সবাজারের ২৫০ কিলোমিটার কাছে চলে এসেছে। ইতোমধ্যে এর অগ্রভাগ কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করছে। বিকেল নাগাদ এর মূল কেন্দ্রটি উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম শেষ করবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শাহ আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, মিয়ানমারে মূল আঘাত করবে মোখা। বাংলাদেশের উপকূলে ঘূর্ণিঝড়টির কারণে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কমে এসেছে। বিকেল নাগাদ বাংলাদেশ অংশ থেকে এটি দুর্বল হয়ে যাবে। রোববার (১৪ মে) সকাল ১১টায় আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শাহ আজিজুর রহমান সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, টেকনাফের মিয়ানমারের সিটওয়ায় মূল আঘাত হানবে মোখা। বাংলাদেশে ঝুঁকি কমে এসেছে। বিকেলের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ অংশ অতিক্রম করার পর এটি দুর্বল হতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের মূল ঝুঁকিটা চলে যাবে মিয়ানমার অঞ্চল দিয়ে। টেকনাফ, কক্সবাজারসহ বাংলাদেশের অঞ্চলগুলো ঝুঁকিমুক্ত হতে চলেছে। এর ফলে শুরু থেকে ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে আমাদের যে ঝুঁকির সম্ভাবনা ছিল, এখন আর ততটা নেই।’এ দিকে আবহাওয়া অধিদফতরের ১৯ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (১৯.২° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১.৮° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে।

এটি আজ সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৩৫ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৫০ কি.মি. দক্ষিণে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৩৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৫০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল। বর্তমানে এর অগ্রভাগ কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করছে। আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ বিকেল নাগাদ সিটুয়ের (মিয়ানমার) নিকট দিয়ে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে। অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ (দশ) নম্বর মহাবিপদ সংকেত (পুন:) ১০ (দশ) নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৮ (আট) নম্বর মহাবিপদ সংকেত (পুনঃ) ৮ (আট) নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত (পুন:) ০৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ (দশ) নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ (আট) নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলার নদী বন্দরসমূহকে ৪ (চার) নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত (পুন:) ৪ (চার) নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ০৫-০৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারী (৪৪-৮৮ মিমি) থেকে অতি ভারী (২৮৯ মিমি) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধ্বস হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।