রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে 'জাতিসত্তা বিষয়ক সম্পাদক' পদ যুক্তসহ চার দফা প্রস্তাবনা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী ছাত্র সংগঠনগুলো।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে 'জাতিসত্তা বিষয়ক সম্পাদক' পদ যুক্তসহ চার দফা প্রস্তাবনা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী ছাত্র সংগঠনগুলো। সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি উত্থাপন করা হয়।

সংগঠনগুলো উত্থাপিত চার মূল দাবি হলো:পাহাড় ও সমতলের সংখ্যালঘু জাতিসত্তা বিষয়ক সম্পাদক পদ সৃষ্টির দাবি জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য রক্ষা, পিছিয়ে পড়া জাতিসত্তার শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিতকরণ, ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চা, গবেষণা এবং নানাবিধ সমস্যা সমাধানে এই সম্পাদক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। তিনি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বুলিং, বর্ণবাদ ও বৈষম্য প্রতিরোধে কাজ করবেন। পাশাপাশি, রাকসু সিনেটে যে পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি থাকেন, তাঁদের মধ্যে এই সম্পাদক সংখ্যালঘু জাতিসত্তার প্রতিনিধি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক সম্পাদক পদ যুক্ত করার দাবি তোলা হয়েছে। এই সম্পাদক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারকে আধুনিক ও সমন্বিত হাসপাতালে উন্নীত করতে প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী—সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে এবং চিকিৎসা কার্যক্রমের সুষ্ঠু তদারকিতে তিনি ভূমিকা রাখবেন।

যে সকল শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা নারীর প্রতি নিপীড়নের প্রমাণ রয়েছে, তাদের রাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করার দাবি জানানো হয়েছে। এর মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা এবং নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ প্রতিষ্ঠিত হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

ছাত্র সংসদের সভাপতির ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং উপাচার্যের একক নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে ছাত্রদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে রাকসু পরিচালনার দাবি তোলা হয়েছে। এতে রাকসু হবে স্বাধীন, গণতান্ত্রিক ও কার্যকর একটি ছাত্র সংসদ, যেখানে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত থাকবে।

এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের  আদিবাসী শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিত করতে তারা কিছু প্রস্তাবনা উত্থাপন করে। সেগুলো হলো পাহাড় ও সমতলের সংখ্যালঘু জাতিসত্তার শিক্ষার্থীদের কোটা সিট বৃদ্ধি করা ও সকল বিভাগ/ইন্সটিটিউটে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
সকল জাতিসত্তাসমূহের নিজস্ব মাতৃভাষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট চালু করা।  
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত পাহাড় ও সমতলের জাতিসত্তা শিক্ষার্থীদের হলে আবাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে পাহাড় ও সমতলের জাতিসত্তা বিষয়ক একটা কর্ণার রাখা।
পাবর্ত্য চট্টগ্রাম ও সমতলের জাতিসত্তাদের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবি ও চৈত্র সংক্রান্তিতে নূন্যতম ৫ দিন ছুটি ঘোষণা করা।

সংবাদ সম্মেলনে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), আদিবাসী স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব রাজশাহী ইউনিভার্সিটি (আসারু), বাংলাদেশ কোচ-রাজবংশী-বর্মন ছাত্র সংগঠন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।a