রাজবাড়ী জেলা শহরের বড়পুলে অবস্থিত ডা. রতন ক্লিনিকে একের পর এক রোগী মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে

রাজবাড়ী জেলা শহরের বড়পুলে অবস্থিত ডা. রতন ক্লিনিকে একের পর এক রোগী মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। শাহানা খাতুন (৪০) নামে একজন প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশনের পর মৃত্যু ঘটনা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনায় ৪ লক্ষ টাকায় দফারফা হয়েছে। এ ক্লিনিকে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।  

জানা গেছে, গত ২৩ এপ্রিল রাত পৌনে ৮ টার সময় রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল থেকে ডা. রতন ক্লিনিকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের মাটিপাড়া গ্রামের মোঃ ফারুক মন্ডলের স্ত্রী শাহানাকে আনা হয়। এরপর ক্লিনিকে রাত সাড়ে ৯টায় তাঁর সিজারিয়ান অপারেশন সম্পন্ন করা হয়। সিজারিয়ান অপারেশনের পর শাহানার নবজাতক ছেলে সুস্থ রয়েছে। তার ইতোপূর্বে আরো চারটি কন্যা সন্তান রয়েছে। ডা. রইসুল ইসলাম (রতন)-এর তত্ত্বাবধানে এ সিজার পরিচালনা করা হয়। অপারেশনে সহযোগিতা করেন ডা. নিয়ামত উল্লাহ ও ডা. রিগান। অপারেশনের পর একলামশিয়া জাতীয় জটিলতা দেখা দিলে রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়ে পড়ে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে উঠলে দ্রুত তাঁকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পর রাতেই তিনি মারা যান।

২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী আম্বিয়া আক্তার বীনা (২৫) নাম এক সিজারিয়ান রোগীর মৃত্যু হয়। ওই রোগীর সিজার করেছিলেন ক্লিনিক মালিক রাইসুল ইসলাম রতন। ওই ঘটনায় অর্থের বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া হয়। ২০২২ সালের ৮ জুলাই চিকিৎসকের ভূলের কারণে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের কালিনগর গ্রামের ফিরোজ কাজী (৪৫) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ফিরোজ কাজীর স্ত্রী মর্জিনা বেগম বাদী হয়ে ২০২২ সালের ৯ জুলাই ক্লিনিক মালিক ডা. রাইসুল ইসলাম রতন ও ডা. মোঃ হাসান আলী সহ অপারেশন সংশ্লিষ্ট ৪-৫জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। পরে এঘটনাটিও ৫লক্ষ টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা দেওয়া হয়। ৯ জুলাই লাইসেন্স নবায়ন না থাকায় ক্লিনিক বন্ধ করাসহ রোগী মৃত্যুর ঘটনায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আর আলোর মুখ দেখেনি।

ডা. রতন ক্লিনিকে ভর্তি করা সদর উপজেলার কাজিবাঁধা গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ১২ হাজার টাকা চুক্তিতে শাহানাকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে থেকে এনে সিজারিয়ানের জন্য ডা. রতন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। অপারেশনের পর রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়ে পড়ে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে উঠলে দ্রুত তাঁকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পর রাতেই তিনি মারা যান। এ ঘটনার পর গত বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সকালে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ এবং তারা রোগীর স্বজনসহ আলোচনায় বসা হয়। এক পর্যায়ে তারা ৫ লাখ টাকা দাবী করেন। তবে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রোগীর স্বজনদের চার লাখ টাকা প্রদান করেন। যে কারণে রোগীর স্বজনরা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি।

এ বিষয়ে ডা. রতন ক্লিনিক ম্যানেজার (অ্যাডমিন ও ফিন্যান্স) আকলিমা আক্তার তমা বলেন, “সদর হাসপাতাল থেকে রোগীকে ক্লিনিকে আনা হয়। এখানে সিজার করার পর তাঁর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। ফরিদপুরে পাঠানোর পর তাঁর মৃত্যু হয়।” এ অপারেশনে ডা. রাইসুল ইসলাম রতনের নেতৃত্ব ডা. নিয়ামত উল্লাহ, ডা. রাবেয়া আক্তার তামান্না ছিল বলে দাবী করেন। পরে ডা. রাবেয়া আক্তার তামান্না ওইদিন রাজবাড়ী ছিল না কিভাবে ক্লিনিকে আসলো জানতে চাইলে তখন বলে এটা আমার ভূল হয়েছে, মুলত ডা. রিগান ছিলেন।
ডা. রিগান বলেন, যখন বাচ্চাটি বের করা হয়। তখন রোগীর খিচুনী ওঠে, তারপরই অপারেশন ক্লোজ করে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়েছে।

ডা. নিয়ামত উল্লাহ বলেন, রাত সাড়ে ৮টার দিকে রোগীকে অপারেশন করার জন্য নিয়ে আসা হয়। আমি নিয়ম-মাফিক এনেস্থেশিয়া প্রদান করি। অপারেশন করেন ডা. রাইসুল ইসলাম রতন, সহযোগিতা করেন, ডা. রিগান ও আমি।
রাজবাড়ী সিভিল সার্জন ডা. এস. এম. মাসুদ বলেন, রাজবাড়ীর ডা. রতন ক্লিনিকে সিজারিয়ানের পর রোগী মৃত্যুর ঘটনায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।