ফেসবুকে পরিচয়, প্রেম-ভালোবাসা অতপর মোবাইলে বিয়ে। সংসারের আগেই ডিবোর্স। জোড়পুর্বক স্বামীর বাড়ীতে পাঠানোর পরদিনই মিলল রিয়া (১৯) নামে কলেজ ছাত্রীর মরদেহ। এ ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড দাবী করে জড়িতদের বিচার দাবী জানিয়ে সোমবার বিকেলে রাজবাড়ীর কালুখালী প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন নিহত কলেজ ছাত্রী রিয়ার মা গার্মেন্সকর্মী নাসিমা বেগম।
নাসিমা বেগম বলেন, স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হওয়ার পর গার্মেন্সে চাকুরী করে মেয়ে রিয়াকে মানুষ করি। সে কালুখালীর মৃগী শহীদ দিয়ানত ডিগ্রী কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। ফেসবুকে পরিচয়ের সুত্রধরে ৪ বছর পুর্বে টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর থানার কালিদাস ঠকানীপাড়া গ্রামের বাবুলের ছেলে সৌদি প্রবাসী নিরব (২৩) সাথে মোবাইলে বিয়ে হয়। বিয়ের পর শশুর বাড়ীতে ৫ মাস গিয়ে সংসার করে। সেখানে তার শশুর-শাশুরী শারিরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে। সেখান থেকে মায়ের বাবার বাড়ী কালুখালী উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের বিকয়া গ্রামে এসে বসবাস ও মৃগী শহীদ দিয়ানত ডিগ্রী কলেজে পড়ালেখা করতে থাকে। নিরব সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে গত বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) কলেজে আসে। সেখানে রিয়ার সাথে খারাপ আচরণ করে ও জোড়পুর্বক নিয়ে যাওয়ার জন্য হুমকি প্রদর্শন করে। রিয়ার সাথে তার মামা বাড়ীতে গেলে ওই বাড়ীর লোকজন তাকে অভিভাবক নিয়ে আসতে বলে। পরে অভিভাবক নিয়ে আসতে অপারগতা প্রকাশ করাসহ ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলে নিতে হুমকি দেয়। রিয়াকে পাংশা উপজেলার মাছপাড়ার শিহড় গ্রামের তার খালা রোজিনার বাড়ীতে যায়। গত ২২ এপ্রিল সকালে রিয়া কাজীর মাধ্যমে ডিবোর্স প্রদান করে। ওইদিনই রিয়ার বাবা আমিরুল ইসলাম পাংশা থানায় অভিযোগ দায়ের করে। ওইদিনই পাংশা থানার এসআই শাওন তার খালা বাড়ীতে গিয়ে হুমকি-ধামকি দিলে রিয়ার খালা রোজিনা তাকে নিয়ে থানায় যায়। সেখানে উপস্থিত রিয়ার বাবা আমিরুল ইসলাম, তার চাচা-চাচি ও তালাকপ্রাপ্ত স্বামী নিরবের উপস্থিতিতে পুলিশ রিয়ার সিদ্ধান্ত অমান্য করে তাদের হাতে তুলে দেয়। সেখান থেকে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা থানার চরপাড়া গ্রামের বাড়ীতে নিয়ে রাতে পুনরায় বিয়ে দিয়ে শাওনের সাথে পাঠায়। পরদিন রিয়া ফোনে তার মাকে জানায় আমাকে বাঁচাও আমাকে মেরে ফেলবে। পরে শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে ফোন পাই আমার মেয়ে আত্নহত্যা করেছে। কিন্তু ওরা পরিকল্পিত ভাবে আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। আমি সখিপুর থানায় মামলা করতে চাইলে রিয়ার বাবার দিয়ে অপমৃত্যু মামলা করেছে। পরে মেয়ের লাশ কালুখালীর বিকয়া গ্রামের বাড়ীতে এনে দাফন করা হয়েছে। আমি মেয়ে হত্যার বিচার দাবী করছি।
রিয়ার খালা রোজিনা পারভীন বলেন, পাংশা থানার এসআই শাওন ও রিয়ার বাবা, চাচা-চাচি ও নিরব আমার সাথে খারাপ আচরণ করেছে। রিয়া যেতে না চাইলেও তাকে জোড়পুর্বক বাবার সাথে পাঠায়। আমি সঠিক তদন্ত পুর্বক হত্যার বিচার দাবী করছি।
এ বিষয়ে পাংশা থানার এসআই শাওন বলেন, রিয়ার বাবার আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে উদ্ধার করে বাবার জিম্মায় প্রদান করা হয়েছে। কোন খারাপ আচরণ বা জোড়পুর্বক দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।