সাঞ্জু বারাইক ঢাবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। থাকতেন জগন্নাথ হলে। একাধিক সূত্র জানায়, তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামে হলেও পুলিশের তথ্যমতে তিনি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বাসিন্দা।
মৃত্যুর আনুমানিক পাঁচ ঘণ্টা আগে, রোববার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি আবেগঘন পোস্ট করেন সাঞ্জু। পোস্টে তিনি লেখেন:
"আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আমি দিনের পর দিন কাউকে ডিস্টার্ব করে গেছি। উল্টো মানুষকে দোষারোপ করা আমার একদম ঠিক হয়নি। আমি সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি দিনের পর দিন অন্যায় করেছি, নিজের দোষ ঢেকে অপরজনকে দোষ দেওয়া আমার ঠিক হয়নি। আমার কারণে কারো কোনো ক্ষতি হলে সে দায় একান্তই আমার।"
এই পোস্টের পর অনেক বন্ধু ও সহপাঠী উদ্বেগ প্রকাশ করলেও, দুঃখজনকভাবে কেউ তাঁর অবসাদময় অবস্থায় তাত্ক্ষণিক সহায়তা করতে পারেননি।
জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক দেবাশীষ পাল জানান, “দুই দিন সে হলে ছিল না। আজ ভোর চারটার দিকে হলে আসে। এরপর মিনিট দশেক পর রবীন্দ্র ভবনের ছাদে যায়। পরে ভবনের নিচে তার রক্তাক্ত মরদেহ পাওয়া যায়।”
প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, “আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। ছাত্রদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আরও জোরালোভাবে কাজ করবে।”
শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মুনসুর জানান, হলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে—সাঞ্জু ভবনের ছাদ থেকে নিচে পড়ে গেছেন। তিনি বলেন, “প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যার ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে। তবে এটি দুর্ঘটনা না পরিকল্পিত আত্মহত্যা, তা তদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।”
সাঞ্জুর মৃত্যুর খবরে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর সহপাঠীরা জানান, তিনি ছিলেন শান্ত স্বভাবের, ভদ্র ও চিন্তাশীল একজন তরুণ। এমন এক হতাশাজনক সিদ্ধান্তে তাঁরা বিস্মিত এবং ব্যথিত।
একজন সহপাঠী বলেন, “আমরা কখনো ভাবতেও পারিনি সাঞ্জু এমন কিছু করতে পারে। ওর কোনো সমস্যা ছিল, সেটা যদি আগে জানতে পারতাম...”
সাঞ্জুর মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের সংকট ও সহানুভূতিশীল পরিবেশের অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা দ্রুত পরামর্শদাতা (কাউন্সেলিং) সেবা জোরদার এবং আবাসিক হলে সহানুভূতিশীল মনিটরিং ব্যবস্থার দাবি তুলেছেন।