বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, যেকোনো নির্বাচনের আগে অবশ্যই দুটি কাজ সম্পন্ন করতে হবে। একটি হচ্ছে খুনিদের বিচার, এ দৃশ্যমান হতে হবে; আর একটি হচ্ছে প্রয়োজনীয় সংস্কার - এই দুটি ছাড়া বাংলাদেশের জনগণ কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) লালমনিরহাট কালেক্টরেট মাঠে ঐতিহাসিক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা আমীর এডভোকেট আবু তাহের সভাপতিত্বে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি এডভোকেট ফিরোজ হায়দার লাভলু সঞ্চালনা করেন।
জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, আমরা সুষ্ঠ নির্বাচন চাই, কালো টাকা ও পেশীশক্তির প্রভাব যুক্ত নির্বাচন আমরা দেখতে চাই না। সেজন্য অবশ্যই নির্বাচনের সমতল মাঠ তৈরি করতে হবে।ভারতের সাথে সম্প্রীতি, শ্রদ্ধা ও সমতার ভিত্তিতে প্রতিবেশি হিসাবে বসবাসের দাবী জানিয়ে জামায়াতের আমীর বলেন, আমরা ভালো থাকলে তারাও ভালো থাকবে। আমাদের ভালো কেড়ে নিলে ভারতকে চিন্তা করতে হবে তারা ভালো থাকবে কিনা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, ফ্যাসিবাদের পতন হলেও এখনও কিছু কু-রাজনীতক চাঁদাবাজি-দখলবাজি করছে। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদরে সম্মান, নিরাপত্তা ও কাজের ব্যবস্থা করবে বলেও তিনি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন। পাশাপাশি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহ লালমনিরহাটের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীকে ক্ষমতায় আনার আহ্বান জানান।
তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, আমরা এমন একটা দেশ চাই, যেখানে পক্ষ-বিপক্ষ বিভাজন চাই না। টুকরা টুকরা জাতি চাই না। আমরা মাইনরিটি মেজরিটি শব্দই শুনতে চাই না। এখন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকেরাও বলেছে এই কথাগুলো বলেই বলেই আমাদের শোষণ করা হয়েছে। আমরাও চাই না। নারী পুরুষ নির্বিশেষে এই দেশকে গড়ে তুলবো। নারীদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হবে। তাদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে। তারা নিরাপদভাবেই ঘরে থাকবেন, বাইরে যাবেন পেশাগত দায়িত্ব পালন করবেন। যুবকদের হাত কাজের হাতে পরিণত করবো। সেই অপেক্ষায় আছি। আমাদের লক্ষ লক্ষ বলছেন যে জীবন দিবো দেশের সার্বভৌমত্ব দিবো না। কারো লাল চোখের দিকে আর আমরা তাকাবো না। আমাদের দিকে যদি কেউ লাল চোখ তুলে তাকায় তাও আমরা বরদাস্ত করবো না। আমরা পিন্ডির হাত থেকে মুক্ত হয়েছি অন্য কারো হাতে বন্দি হওয়ার জন্য না। বরং সত্যিকার অর্থে একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হওয়ার জন্য। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সেই বৈষম্যহীন মানবিক সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে চায়। এটা কী আপনারা সবাই চান যেদিন এই দেশে ইনসাফ ন্যায়বিচার কায়েম হবে। আমরা সেই দিনটির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। এজন্য আপনাদের ভালবাসা দরকার, দোয়া চাই, সহযোগিতা চাই, ইতিবাচক সমালোচনাও চাই। আমরা বিভেদহীন জাতি চাই। আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতি নিয়ে সামনে এগুতে চাই,লালমনিরহাটের প্রাণের দাবি তিস্তা মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও লালমনিরহাটের বিমানবন্দর চালু করতে হবে তাহলে বেকারত্ব দূর হবে।
এর আগে জনসভায় যোগ দিতে জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে দলের কর্মী-সমর্থকরা সকাল থেকে মিছিল নিয়ে জনসভাস্থলে এসে উপস্থিত হন। এ জনসভাকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিল ব্যাপক উৎসবের আমেজ। কালেক্টরেট মাঠ ছাড়াও শহরের অপর একটি মাঠে মহিলাদের জন্য বড় পর্দার ব্যবস্থা করা হয়।
জেলা জামায়াতে ইসলামির আমীর অ্যাডভোকেট আবু তাহেরের সভাপতিত্বে জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল। এছাড়া দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দও এসময় জনসভায় বক্তব্য রাখেন।