মেয়র তাপস বলেন, ‘এখানে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা আছেন, আমি তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আমি তাদের নির্দেশনা দিচ্ছি, আজকে থেকেই দ্রুতগতিতে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী নদীগুলোর সামনে থেকে অবৈধ স্থাপনা এবং লঞ্চ টার্মিনালগুলো সরিয়ে নেয়া হোক।’

পুরান ঢাকার ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে লালকুঠি-রূপলাল হাউসের সামনে থেকে দ্রুত সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল সরাতে বলেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

রাজধানীর সদরঘাটের লালকুঠি ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে সোমবার ‘ঢাকা সিটি নেইবারহুড আপগ্রেডিং প্রজেক্ট’র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআইডব্লিউটিএ) এ নির্দেশনা দেন তিনি।

মেয়র তাপস বলেন, ‘এখানে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা আছেন, আমি তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আমি তাদের নির্দেশনা দিচ্ছি, আজকে থেকেই দ্রুতগতিতে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী নদীগুলোর সামনে থেকে অবৈধ স্থাপনা এবং লঞ্চ টার্মিনালগুলো সরিয়ে নেয়া হোক।

‘আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুলোকে সরাতে হবে। এটি কীভাবে করবেন তা আপনারা জানেন, আমি না। আমি শুধু জানি ঢাকাকে নতুন করে সাজাতে হবে। আমরা শুধু লালকুঠি বা নর্থব্রুক হল নতুন করে সাজাব বা গড়ে তুলব না, বরং আমরা নতুন করে গড়ে তুলব আমাদের ঢাকাকে।’

মেয়র বলেন, ‘যেভাবে ঢাকায় জায়গাগুলোকে দখল করা হয়েছে, চারদিকে শুধু বাজার আর বাজার। আমরা চাই, ঢাকা হবে পর্যটন নগরী। ঢাকা হবে ঐতিহ্য ও ইতিহাসের নগরী। এ জন্য আমরা পথনকশা শুরু করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি অনেক ভেবেছি কীভাবে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করা যায়। আমাদের মূল লক্ষ্য ঢাকাকে সংরক্ষণ করা, শুধু লালকুঠিকে সংরক্ষণ করা নয়। আমাদের প্রাণের ঢাকা, যে ঢাকাকে আমরা খুব ভালোবাসি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকাকে সংরক্ষণ করা সম্ভব।

‘বিশ্বব্যাংককে ধন্যবাদ জানাই ঢাকাকে সংরক্ষণ করতে এ প্রকল্পে সহযোগিতা করার জন্য। সচেতন নাগরিকসহ সবাইকে আহ্বান জানাব ঢাকাকে সংরক্ষণ করতে আমাদের সহযোগিতা করার জন্য।’

‘ঢাকাকে যদি উপভোগ করতে হয় তাহলে নদীকে উপভোগ করতে হবে। ঢাকাকে যদি উপভোগ করতে হয় তাহলে লালকুঠি, রূপলাল হাউস, আহসান মঞ্জিলসহ ছোট কাটরা, বড় কাটরা, লালবাগের কেল্লা একে উপভোগ করতে হবে, যেটা আমাদের পরিচিতি দেবে ঢাকার।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বহির্বিশ্বে গিয়ে কিন্তু পুরোনো শহরটাকে উপভোগ করতে যাই। নতুন শহরকে উপভোগ করতে যাই না। তাই আমাদেরও ঢাকাকে সংরক্ষণ করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মারসি মিয়াঙ টেমবন বলেন, ‘সবার পর্যবেক্ষণগুলো শুনছিলাম, এটা খুবই ভালো লাগছিল। পরিদর্শন করে যখন দেখছিলাম তখন সবাই যে বিষয়টি বলছিল তা হলো জনসম্পৃক্ততা জরুরি। সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

‘ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর সংরক্ষণে সবার সম্মিলিত উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। আমরা এই উদ্যোগের পাশে থেকে এটাই বলতে চাই, উদ্যোগগুলোর যেন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়।’

ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘গত ৫০ বছরে যেসব মেয়র দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের সবাই ঢাকা নগরীর ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষায় কিছুটা উদাসীনতা দেখিয়েছেন। আমরা এখন একজন মেয়র পেয়েছি যার কাছে ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণের গুরুত্ব পেয়েছে।

‘পুরান ঢাকার মানুষের অধিকার আছে ধানমন্ডি, গুলশান এলাকার মানুষের মতো বসবাস করার। বিশ্ব ঐতিহ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে সেই পরিবেশ পাবে বলে আশা করি।’

ইনস্টিটিউট অফ আর্কিটেক্টস বাংলাদেশের (আইএবি) সভাপতি প্রকৌশলী মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘পুরান ঢাকার মানুষ অনেক পুরোনো বিল্ডিং রাতের বেলায় না ভেঙে সেটিকে হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করার জন্য দৌড়াদৌড়ি করবে এমনটাই চাই আমরা।’

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল হুদা বলেন, ‘আমরা জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে নগরীর জন্য ভালো কিছু কাজ করে যেতে পারলেই অন্তত গর্ব অনুভব করতে পারব।’

এর আগে প্রকল্পের বিভিন্ন চিত্রপ্রদর্শনী ঘুরে দেখেন অতিথিরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইইবি, আইএবি ও বিআইপির সভাপতিসহ স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলররা।মেয়র বলেন, ‘নদীর পাড়ে ঢাকাকে অবস্থিত করা হয়েছিল। নদী হলো আমাদের মূল সম্মুখ। এই সম্মুখকে যদি আমরা জীবিত না রাখতে পারি, পরিশীলিত না করতে পারি তাহলে ভেতরে কেউ ঢাকাকে খুঁজে পাবে না। ভেতরে শুধু থাকবে ইট-বালু আর সিমেন্টের কিছু কিছু দালান আর ভবন।