ভোটের মাঠে নেই বিএনপি। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আরিফুল হক চৌধুরী সরে দাঁড়ানোয় শুরুতে আভাস মিলছিল একতরফা নির্বাচনের। কিন্তু প্রতীক বরাদ্দের পর পরিবর্তন আসে ভোটের মাঠে। ‘নৌকাবিরোধী’ ভোটাররা ঝুঁকতে থাকেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতীক হাত পাখার দিকে। ফলে গড়ে ওঠে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা। কিন্তু বরিশালে মুফতি ফয়জুল করীমের ওপর হামলার ঘটনায় সিলেট ও রাজশাহীতে ইসলামী আন্দোলন নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেওয়ায় সিলেটে শুরু হয়েছে নতুন হিসাব। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান সরে দাঁড়ানোয় হাত পাখার ভোট কোন দিকে যাচ্ছে- সে হিসাব এখন নগরজুড়ে।
গত সিটি নির্বাচনে সিলেটে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মেয়র পদে প্রার্থী দিলেও দলটি ছিল আলোচনার বাইরে। নির্বাচনে দলটির প্রার্থী ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন পেয়েছিলেন স্বল্প সংখ্যক ভোট। কিন্তু এবার বিএনপিবিহীন নির্বাচনে ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থান তৈরি করে নেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি নগরী চষে বেড়ান। এতে মোটামুটি জনসমর্থন তৈরিতে সক্ষম হন তিনি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুলের সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সিলেটে জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের সাংগঠনিক অবস্থা খুব শক্তিশালী নয়। সিটি করপোরেশনের ৪২টি ওয়ার্ডের এক তৃতীয়াংশে দল দুটির কমিটিই নেই। কিন্তু কর্মী-সংকটে ভোগা দল দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামানের নৌকা প্রতীকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমিয়ে তুলেছিল।
মূলত আওয়ামী লীগ তথা সরকারবিরোধী ভোটাররা নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে গিয়ে ঝুঁকতে থাকেন লাঙ্গল ও হাতপাখার দিকে। ফলে শুরুতে যেখানে একতরফা নির্বাচনের আভাস মিলছিল, সেখানে জমে ওঠে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা। বিএনপি থেকে সদ্য বহিষ্কৃত কাউন্সিলর প্রার্থীদের কারণে দলটির কর্মী-সমর্থকরাও ভোটের মাঠে রয়েছেন সরব। তাদের কারণেও নৌকাবিরোধী ভোট হিসেবে লাঙ্গল ও হাতপাখার পালে ইতিবাচক হাওয়া লাগে। এদিকে, গত সোমবার বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির ও দলটির মেয়র প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করীমের ওপর হামলার ঘটনায় রাজশাহী ও সিলেট সিটিতে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর সোমবার রাতে সংবাদ সম্মেলন ডেকে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসানও নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেন। এরপর থেকে সিলেট সিটি নির্বাচনের ভোট নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন হিসাব-নিকাশ। ‘নৌকাবিরোধী’ যেসব ভোট হাতপাখার দিকে ঝুঁকেছিল সে ভোটারদের নিয়েই চলছে বিশ্লেষণ।
অনেকের মতে, হাতপাখার সমর্থকদের বড় অংশ লাঙ্গলের পক্ষে যাওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। আবার অনেকের মতে, মাওলানা মাহমুদুলের বর্জনের কারণে ভোটার উপস্থিতি কমবে। হাতপাখার অনেক সমর্থক কেন্দ্রে নাও যেতে পারেন। আর হাতপাখার ভোটারদের নিজের দিকে টানতে পারলে নির্বাচনে চমক দেখানোর সুযোগ রয়েছে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুলের- এমন বিশ্লেষণও অনেকের। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো প্রসঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্র্থী হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান বলেন, নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। বরিশালে দলের আমিরের ওপর যেভাবে ন্যক্কারজনক হামলা হয়েছে এরপর আর এ সরকারের ওপর আস্থা রাখা যায় না। এ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কাছে নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করে লাভ নেই। তাই দলীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করি সচেতন সিলেটবাসীও ভোট বর্জনের মাধ্যমে সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে তাদের রায় দেবেন।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘মানুষ এ সরকার কিংবা সরকারদলীয় প্রার্থীকে পছন্দ করে না। সরকারের দুঃশাসন ও ব্যর্থতায় দেশের মানুষ অতিষ্ঠ। তাই শুরু থেকেই সিলেটে লাঙ্গলের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ইসলামী আন্দোলনের যেসব ভোটার ও সমর্থক ছিলেন তাদের প্রার্থী না থাকায় নিশ্চই তারা লাঙ্গলে ভোট দেবেন। বরিশালে চরমোনাই পীরের ওপর যেভাবে ন্যক্কারজনক হামলা হয়েছে তার প্রতিবাদস্বরূপ তারা নিশ্চই নৌকার বিপক্ষে ভোট দেবেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সিলেটের মানুষ উন্নয়ন চায়। কাক্সিক্ষত উন্নয়নের স্বার্থে তারা নৌকায় ভোট দিতে উদগ্রীব। ২১ জুন সিলেটের মানুষ নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে উন্নয়নের পক্ষে তাদের রায় দেবেন।