সুদানে সেনাবাহিনী ও মিলিশিয়া বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশের নাগরিকদের নিরাপদে রাখা ও তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি আলোচনায় আসে। দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন থেকে শুরু থেকেই সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছে। এরই মধ্যে অন্য দেশের মাধ্যমে এসব নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রথম ধাপে আনুমানিক পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশিকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। দেশে ফিরতে আগ্রহী পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশিকে পোর্ট সুদানে এবং সেখান থেকে জাহাজে করে জেদ্দায় নিতে চায় খার্তুমের বাংলাদেশ দূতাবাস। এরপর জেদ্দা থেকে বাংলাদেশিদের বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফেরানো হবে। সম্প্রতি সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্র্তৃপক্ষকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। 

গতকাল বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আফ্রিকা অনুবিভাগের পরিচালক মো. তারিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি আরও বলেন, সুদানে অবস্থানরত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা খার্তুম ছেড়ে নিরাপদে আছেন। অন্য দেশের মাধ্যমে প্রথম ধাপে ৫০০-এর মতো বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এ সংখ্যা কমবেশি হতে পারে। আর নিরাপত্তার কারণে নির্দিষ্ট কোনো দেশের নাম উল্লেখ করা হচ্ছে না। তিনি জানান, সুদানের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দেশটিতে ১০ হাজারের মতো বাংলাদেশি রয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যদেরও ফিরিয়ে আনা হবে। এ প্রসঙ্গে খার্তুমে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত (চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স) তারেক আহমেদ গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, দূতাবাসের কর্মকর্তারা বর্তমানে খার্তুম থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছেন। তারা দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তিনি আরও বলেন, ‘৩০ এপ্রিল প্রথম ধাপে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য একটা তারিখ ঠিক করেছি। 


তবে যেহেতু এখনো জাহাজের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি, তাই তারিখটা এখনই বলা যাবে না। জাহাজের তারিখ চূড়ান্ত হওয়ার পর বাসের সময় ঠিক করা হবে। তবে আশা করি ৩০ এপ্রিল থেকে ২ মের মধ্যে প্রথম ধাপকে জেদ্দায় নিতে পারব।’ এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, সুদানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনা হবে। তিনি লিখেছেন, সুদানে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদে অন্য দেশের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। খার্তুমে বাংলাদেশ দূতাবাস ইতিমধ্যে এ বার্তা সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের মধ্যে প্রচার শুরু করেছে।

শাহরিয়ার আলম ফেসবুকে আরও লিখেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে কীভাবে কোন পদ্ধতিতে তারা যাত্রা করবেন। সবাইকে দূতাবাসের নির্দেশনা মেনে নিবন্ধন এবং প্রয়োজনীয় কাজ করার অনুরোধ করছি। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের অনুরোধ করছি দূতাবাসে যোগাযোগ না করার জন্য। কারণ সবাই ব্যস্ত এবং রুটগুলো নিরাপত্তার খাতিরে না জানানোই ভালো। আমরা সবার সহযোগিতা কামনা করছি। এর আগে গত শনিবার সুদানের চলমান পরিস্থিতির কারণে দেশটি সফর থেকে বিরত থাকার জন্য বাংলাদেশিদের পরামর্শ দিয়ে সতর্কতা জারি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।সুদানের সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে লড়াই শুরু হওয়ার পর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে এখন পর্যন্ত চার শতাধিক লোক প্রাণ হারিয়েছে।