২০২৫ শিক্ষাবর্ষের “নবম ও দশম” শ্রেণির ‘বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি’ বইয়ের পেছনের কাভার থেকে “আদিবাসী” গ্রাফিতি সরিয়ে দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। গ্রাফিতিতে সংযোজন করা “আদিবাসী” পরিভাষা বাতিল করে “বল বীর, চির উন্নত মম শির” গ্রাফিতি যুক্ত করা হয়েছে। রবিবার (১২ জানুয়ারি) ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ পাঠপুস্তকে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও রাষ্ট্রদ্রোহী পরিভাষা উল্লেখ করে “আদিবাসী” পরিভাষা বাতিল এবং রাষ্ট্রদ্রোহী এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে এনসিটিবি ঘেরাও করে “স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি”র ব্যানারে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভের একদিনের মাথায় “আদিবাসী” লেখা গ্রাফিতি সোমবার ১৩ জানুয়ারি দেওয়া হয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। একদল শিক্ষার্থীর দাবির মুখে গত সোমবার ১৩ জানুয়ারি রাতে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেনিটি’ নামের এই সংগঠনটির যুক্তি, সংবিধানে ‘আদিবাসী’ শব্দের ব্যবহার নেই। তাদের দাবি, সংবিধানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা উপজাতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তাই ‘আদিবাসী’ শব্দটির ব্যবহার যথাযথ নয়। জানা গেছে, রবিবার এনসিটিবি ঘেরাও করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা সরকারের কাছে পাঁচ দফা দাবি জানান। ওই দাবিগুলো হলো–
১. পাঠ্যপুস্তক থেকে রাষ্ট্রদ্রোহী “আদিবাসী” শব্দ প্রত্যাহার, অখণ্ড ভারতের কল্পিত মানচিত্রের সব ধর্মীয় গাছের ছবি মুছে ফেলা, পরিমার্জন কমিটিতে থাকা দেশীয় মূল্যবোধবিরোধী ধর্মহীন রাখাল রাহা ওরফে সাজ্জাদকে অপসারণ, “আদিবাসী” শব্দ অন্তর্ভুক্তি অনুমোদন করায় এনসিটিবির চেয়ারম্যান ও এর সঙ্গে যোগসাজশ থাকা কর্মকর্তাদের পদত্যাগ এবং তদন্ত কমিটির মাধ্যমে পাঠ্যপুস্তকে “আদিবাসী” শব্দ সংযোজনের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের অপসারণ ও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
২. অবাঙালিদের (ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী) আদিবাসী সম্বোধন করে কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না, কোনো বই-পুস্তক ছাপানো যাবে না, লেখালেখি করা যাবে না, কোনো নাটক সিনেমা বা গল্প-কাহিনী রচনা করা যাবে না। বাঙালিদেরকেই বাংলাদেশের একমাত্র আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকতে হবে।
৩. ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের (অবাঙালি) “আদিবাসী” বলা ও প্রচারণাকে রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
৪. শিক্ষার কথিত মানোন্নয়নের নামে দেশের শিক্ষাখাতে আন্তর্জাতিক সংস্থা বা এনজিও থেকে তহবিল নেওয়া বন্ধ করতে হবে এবং বৈদেশিক তহবিলের নামে শিক্ষা কারিকুলামকে সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে তুলে দিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের মগজ বিক্রি করা যাবে না।
৫. দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে শিক্ষানীতি, শিক্ষাক্রম, পাঠ্যক্রম এবং পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও পরিমার্জনে বিদেশি সংস্থা বা তাদের দ্বারা প্রভাবিত ব্যক্তিদের থেকে শতভাগ প্রভাবমুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে “স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি”র পরামর্শ ও প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে।