অনলাইনে নারীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ,ঘৃণা ও অশ্রদ্ধা ছড়ানোর মতো ঘৃণ্য অপরাধ মোকাবেলায় দক্ষ আইটি টিম গঠনের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার

অনলাইনে নারীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ,ঘৃণা ও অশ্রদ্ধা ছড়ানোর মতো ঘৃণ্য অপরাধ মোকাবেলায় দক্ষ আইটি টিম গঠনের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।
গতকাল সোমবার বিকাল পাঁচটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম মিলনায়তনে "কথা বলো নারী"সংগঠনের উদ্যোগে সংকট ও সম্ভাবনায় "নারীর চোখে বাংলাদেশ"শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণ এবং নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ এ কথা বলেন। তিনি বলেন,শত প্রতিকূলতা ও নিরাপত্তাহীনতার মাঝেও নারীরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে ঈর্ষণীয়ভাবে এগিয়ে চলছে।সেই তুলনায় পুরুষরা পিছিয়ে পড়ছে এটাও ভালো লক্ষণ নয়।তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন সত্তরের দশকে একশ জন ছেলে শিক্ষার্থীর বিপরীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা থাকতো বিশ থেকে পঁচিশ জন। বর্তমানে সেই অনুপাত একশোর বিপরীতে আশি থেকে পঁচাশি জন। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, নারী ও শিশুদের কল্যাণে সরকারের ইতিবাচক ভূমিকা পালনের সূচনাটা করে যেতে চায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের মতো ঘটনায় নারীরা নারীর পাশে দাঁড়ালেও মাদ্রাসা/স্কুল পড়ুয়া ছোট্ট ছেলেদের বলাৎকারের ঘটনায় পুরুষরা সেভাবে সোচ্চার হয় না, অনেক ক্ষেত্রে লোকলজ্জার ভয়ে ঘটনা চেপে যায়।
শারমীন এস মুরশিদ আরো বলেন, ফেইসবুকে নারী অধিকারের কথা বললেই এক শ্রেণির লোক আজেবাজে ও অশ্লীল মন্তব্য করে-এটা নারীর প্রতি একধরনের অবমাননা। অতএব,নারীকে মানুষ হিসেবে ভাবলে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যেতে পারে।
প্রধান অতিথি আরো বলেন, জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশেও নারীদেরকে নানান প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সেজন্য সমাজকর্মীদের এবং জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া মেয়েদেরকে সুসংগঠিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ ইতোমধ্যেই আমরা নিয়েছি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশে নারীরা আর পুরুষের 'ব্যাটাগিরি' মেনে নিবে না। নারীদের অসম্মান করে কথা বলা যাবে না এবং পাবলিকলি বক্তব্য প্রদানের ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক শব্দ পরিহার করতে হবে। তিনি বলেন পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থায় খোদ পুরুষও নিপীড়িত।তাই,পুরুষদেরকে সবার আগে মানুষ হয়ে উঠতে হবে। নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য সমান নাগরিক মর্যাদাসম্পন্ন সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ বলেন, সারাদেশে নারীরা সাইবার বুলিংয়ের শিকার। নারীদের নিরাপত্তার জন্য ইতোমধ্যেই আমরা উদ্যোগ নিয়েছি এবং তা যথাযথ বাস্তবায়নে আমরা বদ্ধপরিকর।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রিজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা বলেন, তিউনিশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াসহ বেশ কিছু মুসলিম দেশে নারীদের উত্তরাধিকার ও সম্পত্তিতে সমান অধিকার রয়েছে। আমাদের দেশে নারীর সমতার প্রশ্ন সামনে আসলেই বিশেষ এক মহলের পুরুষদের কীসের এত সমস্যা ?
লেখক ও গবেষক মাহা মীর্জা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশেও নানাবিধ হুমকি, মামলা, নিপীড়ন ও মব ভায়োলেন্সের পরেও অনেক নারী সাহস করে রাস্তায় নামছেন, কথা বলছেন ও অধিকার আদায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি গার্মেন্টস কর্মী ও চা বাগানের শ্রমিকদের ন্যায্য বেতন ও সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকারকে আরো উদ্যোগী হতে হবে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, নারীদের প্রতি সংঘবদ্ধ সাইবার হামলা ঠেকাতে আইসিটি মন্ত্রণালয় ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।আমরা সাইবার নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানাই।
সভাপতির বক্তব্যে নূসরাত হক বলেন, নারীদের কথা বলতে হবে আরো জোরালোভাবে।প্রতিটি বিভাগীয় শহরসহ দেশের সর্বত্র "কথা বলো নারী" সংগঠনের কর্মীরা সফর করবে। সারাদেশে নারীদের কন্ঠ জোরালো করতে আমরা কাজ করে যাবো।
"কথা বলো নারী" সংগঠনের আহ্বায়ক নূসরাত হকের সভাপতিত্বে এবং মাহমুদা সুলতানা রিমি ও কথা আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন  নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, মহিলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শম্পা বসু, নারী সংহতির সদস্য রেক্সোনা সুমী, পরিবেশকর্মী সানজিদা রহমান, হিউম্যান রাইটস এক্টিভিস্ট অরুণ দ্যূতি রাণী, আইরিন আক্তার,সিনথিয়া জাহীন আয়েশা,সীমা আক্তার,সায়েদা এস চৌধুরী,রোকেয়া জাবেদ মায়া,নাজিফা জান্নাত,আদিনা খান,মাইশা মাহা স্নেহা, মোনালিসা,আয়াতুল্লা বেহেস্তী প্রমুখ।
বক্তারা অবিলম্বে নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়েনের দাবী জানান এবং কোনো সুপারিশ নিয়ে দ্বিমত থাকলে তা সমাধানে কার্যকর আলোচনার মাধ্যমে নিরসনের উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানান।