অর্থাৎ প্রতিদিন পাঁচ হাজার ৪৭৯ টন চিনির চাহিদা রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে গত বছরের শুরুর দিক থেকে বিশ্ববাজারে চিনির দাম বাড়তে থাকে। গত বছরের মে মাসের শুরুতে দেশের বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয় ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়।

আবারো বেড়েছে চিনির দাম। খোলা ও প্যাকেটজাত চিনি কেজিপ্রতি দাম ১৬ টাকা করে বাড়ছে। ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, প্রতি কেজি খোলা চিনি ১২০ টাকা এবং প্যাকেট ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। এই সিদ্ধান্ত গতকাল বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, মিল মালিকরা প্রতি কেজি খোলা চিনি ১২৫ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিলেন।এর আগে গত ৭ এপ্রিল সরকার প্রতি কেজি খোলা চিনি ১০৪ টাকা আর প্যাকেটজাত চিনি ১০৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল।তবে সরকার নির্ধারিত দামে চিনি মিলছে না কোথাও। বাজারে প্রতি কেজি চিনিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেশি গুনতে হচ্ছে। অথচ এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য বা পদক্ষেপ নেই।

এর মধ্যেই মিল মালিকরা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব তুলেছেন। চিনির নতুন দর নিয়ে জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের বিপণন বিভাগের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা ও দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁরা সাড়া দেননি। গতকাল মঙ্গলবার বাজার গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি খোলা চিনি কেজি ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখা প্যাকেটের চিনি পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও। এদিকে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে ন্যায্যমূল্যে সরবরাহের জন্য ২১৫ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার টাকার সয়াবিন তেল ও চিনি কিনবে সরকার, যা সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। এ জন্য গতকাল অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় সিঙ্গাপুরের একটি কম্পানি থেকে চিনি ও ভারতের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে সয়াবিন তেল কেনার দুটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান জুম প্ল বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাবে, বছরে দেশে চিনির চাহিদা ২০ লাখ টন।

অর্থাৎ প্রতিদিন পাঁচ হাজার ৪৭৯ টন চিনির চাহিদা রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে গত বছরের শুরুর দিক থেকে বিশ্ববাজারে চিনির দাম বাড়তে থাকে। গত বছরের মে মাসের শুরুতে দেশের বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয় ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। এর পরই বাড়তে থাকে দাম। চলতি বছর এপ্রিলে দাম বেড়ে হয় ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। এপ্রিলের শেষে আরো বেড়ে দাঁড়ায় ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়। বর্তমানে ১৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। চিনির দাম এক লাফে ১৬ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্তের বিষয়ে ক্রেতাদের স্বার্থ রক্ষাকারী সংগঠন কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, ‘দেশের জনগণের প্রতি কর্মকর্তাদের যদি কোনো দায়বোধ থাকত, তাহলে তাঁরা পণ্যমূল্য বাড়ানোর আগে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ না দেখে দেশের মানুষের কথা ভাবত। তারা ব্যবসায়ী স্বার্থ দেখাতে বেশি মনোযোগী। এ জন্য ভোজ্য তেলের পর ব্যবসায়ীরা চিনির দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে। দফায় দফায় পণ্যমূল্য বৃদ্ধিতে দেশের মানুষের সহ্যক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে বাজার। দেশের মানুষ পণ্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে এখন দিশাহারা।’