কুড়িগ্রামে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত রাশিদুল হকের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী । ১৬ আগষ্ট (শুক্রবার) জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের চর কাটগীরি গ্রামে নিহত রাশেদুল ইসলামের বাড়িতে আসেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহাকারী সেক্রেটারী মাওলানা আব্দুল হামিদ।
সেসয় নিহিতের বাড়িতে খোঁজ খবর নেওয়া ও আর্থিক সহযোগিতা করেন তিনি।নিহিত পরিবারকে নগদ এক লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন ।কুড়িগ্রাম জামায়তের আমির মাওলানা আব্দুল মতিন ফারুকীর সভাপতিত্বে নুনখাওয়া কাটগিরি নুরানিয়া ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে সংক্ষিপ্ত এক সমাবেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, বাংলাদেশের মানুষ অবরুদ্ধ ছিল। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে তারা মুক্ত হয়েছে।
বাংলাদেশের মানুষের বাক স্বাধীনতা ছিল না, তারা বাক-স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে। ছাত্ররা এই স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে, এই জালিমের বিরুদ্ধে কঠিন শব্দ উচ্চারণ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আওয়াজ চলে এসেছে রংপুরে এবং সিংহের মতো লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে ছিল বুলেটের সামনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহসী যুবক আবু সাঈদ। আবু সাঈদের কারণে রংপুর আজকে শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের কাছে গর্বিত।বাংলাদেশ এবং রংপুর বিশ্বের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে এই বৈষম্যের বিরোধী আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের কারণে।
আজকে কুড়িগ্রামের রাশিদুল ইসলামের পিতা এক রাশিদুলকে হারিয়েছে ঠিকই, কিন্তু হাজার হাজার রাশিদুল জন্ম গ্রহণ করেছে। শহীদ রাশেদুল ইসলাম শুধু কুড়িগ্রামের সন্তান নয়, সে বাংলাদেশের বীর সন্তান। শহীদ রাশেদুল ইসলাম জীবন দিয়ে এদেশের মানুষকে মুক্ত করেছে।মাওলানা আব্দুল হালিম আরো বলেন, শহিদ রাশিদুল সহ যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছে তারা সকলেই বীর। এদেশের মানুষ তাদের চিরকাল স্মরণ রাখবে।এই আন্দোলনে অনেক শিশু জীবন দিয়েছে, ছাত্র-ছাত্রী জীবন দিয়েছে, সাধারণ মানুষ শ্রমিক জীবন দিয়েছে।সুতরাং এটা শুধু অপরাধ নয়, এটা একটা গণহত্যা।
যে সরকারের সময়ে দেশে একটি শিশু মায়ের কোলে, বাবার কোলে নিরাপদ নয়,নিজের ঘরের বারান্দায় নিরাপদ নয়,ঘরের ছাদে নিরাপদ নয়, সেটা স্বৈরাচার সরকার।তাই এই স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে এ দেশের ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল এবং সরকারকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে।বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে কুড়িগ্রামে রাশিদুল ইসলাম সহ যে সকল শিশু ছাত্র-ছাত্রী শ্রমিক সাধারণ মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে তাদের হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আমরা শহীদ রাশিদুল ইসলামের পরিবারের পাশে আছি ভবিষ্যতেও থাকবো ইনশাল্লাহ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল,কুড়িগ্রাম জেলা সেক্রেটারি মাওলানা নিজাম উদ্দিন, জেলা অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি শাহজালাল সবুজ, জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইয়াসিন আলী সরকার,জেলা প্রচার সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম।জেলা কর্ম পরিষদ সদস্য জহুরুল ইসলাম, নাগেশ্বরী উপজেলা আমীর মাওলানা আব্দুল মান্নান ও সেক্রেটারি মাওলানা শহিদুল ইসলাম সহ জেলা ও উপজেলা ও ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ।উল্লেখ্য যে শহীদ রাশিদুল ইসলাম রাজধানীর শনির আখড়ায় আদমজী গার্মেন্টসে কর্মরত ছিলেন। মৃত্যুর ২২ দিন আগে নতুন বৌউকে ঘরে তুলেছিলো রাশিদুল ইসলাম।
ঘটনার বিবরনে রাশিদুলের ভাবি মৌসুমি খাতুন দৈনিক খবর সংযোগ -কে বলেন, আমার স্বামী আলমগীর হোসেন সহ আমরা ঢাকায় যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় থাকি। আমার স্বামী রিক্সা চালায়।আমিও একটি গার্মেন্ট কাজ করি।আমার ছোট দেবর ৫ দিন আগে আমাদের এখানে এসেছে। সে আদমজী গার্মেন্টস এ চাকরি নিয়েছে। ২ দিন ডিউটি করেছে। গতকাল (৫) আগষ্ট সে যথানিয়মে সকাল ৬ টায় গার্মেন্টসে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে বাড়ি থেকে বেড় হয়।বাহিরে গোলাগুলি হচ্ছে, তাই সে আধাঘন্টা পরে আবারও বাসায় ফিরে আসে।বেলা ১১ টার দিকে সে বাসা থেকে বেড় হয় মিছিলে যোগ দিতে , পরবর্তীতে তার আর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
নিহতের মেঝ ভাবি মুন্নী বেগম বলেন, গতকাল বেলা (৩) টার দিকে আমার কাছে রাশেদুলের নম্বর থেকে ফোন আসে।আমাকে এক অপরিচিত ব্যক্তি বলেন, রাশিদুলের আপনি কে হন? আমি বলি তার ভাবি ।আমাকে জানানো হয় সে মিছিলে পুলিশের গুলি খেয়েছে।আমরা তাকে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করিয়েছি।তার বর্তমান অবস্থা আশংকাজনক। আপনারা তাড়াতাড়ি চলে আসেন।মুন্নী বেগম আরও বলেন , আমরা খবর পেয়ে ৪ টার পরে ঢাকা মেডিক্যালে যাই। সেখানে গিয়ে আতংকে চমকে উঠি।ঢাকা মেডিক্যালে তখন লাশ আর লাশ।আমরা সেখানে ১ ঘন্টার মতো ছিলাম।তাতেই কয়েক ভ্যান লাশের গাড়ি দেখতে পাই।রাশিদুলে মাথায়, বুক সহ মোট ৩ টি গুলি লেগেছিলো।