কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া গ্রামে অস্কার বিজয়ী বিশ্বনন্দিত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়িতে আজ বুধবার (১৪ মে) থেকে তিনদিনব্যাপী বৈশাখী মেলা শুরু হয়েছে

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া গ্রামে অস্কার বিজয়ী বিশ্বনন্দিত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়িতে আজ বুধবার (১৪ মে) থেকে তিনদিনব্যাপী বৈশাখী মেলা শুরু হয়েছে। জনশ্রুতি আছে, প্রায় ২০০ বছর আগে সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ হরিকিশোর রায় চৌধুরী কালভৈরব পূজা উপলক্ষে এই মেলার প্রচলন করেছিলেন। এরপর থেকে প্রতিবছর বৈশাখ মাসের শেষ বুধবার এ মেলা বসে। বর্তমানে কালভৈরব পূজা না হলেও বন্ধ হয়নি মেলা। সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়িটি এলাকায় ‘রায়’ বাড়ি নামেই পরিচিত। এক সময় এই বাড়িটিকে 'পূর্ব বাংলার জোড়াসাঁকো' বলে অভিহিত করা হতো। গ্রামের ঐতিহ্যবাহী রায় চৌধুরী বাড়ির সামনের খোলা মাঠ ও পুকুরের আশেপাশের প্রায় চার একর ভূমিসহ বিশাল এলাকাজুড়ে এ মেলা বসে। সেখানে রকমারি পণ্যের কয়েকশ স্টল বসা ছাড়াও থাকে বাউলগান ও কবিতা পাঠের আসর। ফলে এ মেলাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রথিতযশা কবি-সাহিত্যিকরা এ সময় মসূয়া গ্রামে আসেন। জানা যায়, এ রায় বাড়িতেই ১৮৬০ সালে জন্মগ্রহণ করেন সত্যজিৎ রায়ের পিতামহ প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী। ১৮৮৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন সত্যজিৎ রায়ের পিতা বিশিষ্ট ছড়াকার সুকুমার রায়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির আগেই উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী সপরিবারে কলকাতা চলে যান। কারুকার্যখচিত ভগ্নপ্রায় প্রাচীন দালান পরিবেষ্টিত বিশলায়তনের রায় বাড়িটি বর্তমানে সরকারের রাজস্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। আয়োজকরা জানান, মেলায় রয়েছে রকমারি পণ্যের কয়েকশ স্টল। এসব স্টলে রয়েছে কাঠের আসবাবপত্র, গৃহস্থলি নানা সামগ্রী, খেলনা, মিষ্টান্নদ্রব্য, প্রসাধনীসহ নানা ধরনের পণ্য। এছাড়া রয়েছে শিশুদের চিত্তবিনোদনের জন্য নাগরদোলাসহ নানা আয়োজনও। স্থানীয় বাসিন্দা সমাজকর্মী মানিক ভট্রাচায জানান- মেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কবি, সাহিত্যিক ও বহু দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। প্রতিবছরের মতো এবারও মেলায় বসবে গান ও কবিতা পাঠের আসর। মেলা কমিটির সভাপতি গোলাপ মিয়া জানান, শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এ মেলা এখন এই অঞ্চলের সম্প্রীতির প্রতীক। মেলাকে ঘিরে আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। কটিয়াদী মডেল থানার পুলিশ ইনচার্জ মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, গ্রাম-বাংলার লোকজ সংস্কৃতি হলো মেলা। মেলা উপলক্ষে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম বলেন, বাংলা সাহিত্যের চারণ ভূমি রায় বাড়ীকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর গ্রাম-বাংলার লোকজ সংস্কৃতি বৈশাখী মেলা হয়ে থাকে। বর্তমানে রায়বাড়িটি ব্যাপক সংস্কার করা হয়েছে। এ বছর মেলার নিরাপত্তা ব্যবস্হা আরো বাড়ানো হয়েছে।