কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার ৭ নং লতাচাপলী ইউনিয়নের মিশ্রিপাড়ায় দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ সিমা বৌদ্ধ বিহারে ঝাঁক ঝমক আয়োজনের মধ্যে দিয়ে সাংগ্রাই অনুষ্ঠানেের আয়োজন করেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন জনগোষ্ঠী। সাংগ্রাই অনুষ্ঠানে দূর দূরান্ত থেকে আসেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।
সাংগ্রাই বাংলাদেশী রাখাইন এবং মারমা জাতিগোষ্ঠীর নববর্ষ উৎসবের নাম, যা প্রতিবছর এপ্রিলের ১২ থেকে ১৪ তারিখে পালিত হয়। যদিও এটি মারমাদের অন্যতম প্রধান একটি ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান, তবে রাখাইনরাও নিজস্ব নিয়মে সাংগ্রাইয়ের মাধ্যমে বর্ষবরণ করে নেয়। মারমাদের ক্ষেত্রে তাদের বর্মী বর্ষপঞ্জি অনুসরারেই এটি পালিত হয়। মারমাদের বর্ষপঞ্জিকাকে “ম্রাইমা সাক্রঃয়” বলা হয়। “ম্রাইমা সাক্রঃয়” এর পুরনো বছরের শেষের দুই দিন আর নতুন বছরের প্রথম দিনসহ মোট তিনদিন কে রাখাইনরা ও মারমারা সাংগ্রাই হিসেবে পালন করে থাকে। আগে “ম্রাইমা সাক্রঃয়” অনুযায়ী এই তিনদিন ইংরেজি ক্যালেন্ডারের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝিতে পড়লেও এখন ইংরেজি ক্যালেন্ডারের সাথে মিল রেখে এপ্রিলের ১২,১৩ও ১৪ তারিখে পালন করা হয়। ১২ তারিখের সকালে পাঃংছোয়াই (ফুল সাংগ্রাই), ১৩ তারিখে প্রধান সাংগ্রাই আর ১৪ তারিখে পানি খেলার সাথে রাখাইন ও মারমাদের ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলোও অনুষ্ঠিত হয়।প্রধান সাংগ্রাই তে বিহারে যে ভগবান বুদ্ধ প্রতিকৃতি আছে তাদেরকে পবিত্র পানি দিয়ে গোসল করানো হয়। বুদ্ধকে স্নানস্কৃত পানিকে রাখাইনরা খেয়ে থাকে কারণ মারমাদের বিশ্বাস এই বুদ্ধ স্নানস্কৃত পানি তাদের শরীরে সকল রোগমুক্তির অবসান করাবে। আর এর পরেই ধর্মদেশনা হয়। এতে এলাকার সকল পুরুষ-মহিলা যোগ দেয়। সকল পরিবারেই চাল-নারকেল-চীনা কাগজ-মোমবাতি বিভিন্ন দ্রব্যাদি বিহারে ভগবানের উদ্দেশ্যে নিয়ে আসে। বিহারের প্রধান বৌদ্ধ ভিক্ষু নতুন বছরের শুভদিনের জন্য ধর্মদেশনা দেন।সেই সাথে নতুন বছরের দিনগুলো যেন শুভাকাঙ্ক্ষায় পরিপূর্ণ হয় তার জন্য প্রার্থনা করা হয়। ধর্মদেশনার পরই বৌদ্ধ বিহারে সকলেই ভগবানের উদ্দেশ্যে মোমবাতি জ্বালানো হয়। শুধু ভগবান নয় অনেকে তাদের পূর্বপুরুষদের জাদিতেও মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়।