সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের নামে কোনো প্রকার মাস্টারপ্ল্যান ব্যতীত যত্রতত্র ভবন নির্মাণের প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এতে করে ব্যাপকভাবে গাছপালা কাটা হচ্ছে। নির্বিচারে বৃক্ষনিধনের ফলে ক্যাম্পাসের প্রাণ প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়ছে। বন্যপ্রাণির নিরাপদ আবাসস্থল, অতিথি পাখির অভয়াশ্রমের বৈশিষ্ট্য বিনষ্ট হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন এ পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

গত ২ জুন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কলা ও মানবিকী অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন এবং চারুকলা অনুষদের ভবন নির্মাণে অপরিকল্পিত গাছ কাটার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে পরিবেশবাদী সংগঠন জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি আর্থ সোসাইটি। 

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধন শেষে তারা অপরিকল্পিতভাবে গাছ কাটার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে বৃক্ষরোপণ করেন। 

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের নামে কোনো প্রকার মাস্টারপ্ল্যান ব্যতীত যত্রতত্র ভবন নির্মাণের প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এতে করে ব্যাপকভাবে গাছপালা কাটা হচ্ছে। নির্বিচারে বৃক্ষনিধনের ফলে ক্যাম্পাসের প্রাণ প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়ছে। বন্যপ্রাণির নিরাপদ আবাসস্থল, অতিথি পাখির অভয়াশ্রমের বৈশিষ্ট্য বিনষ্ট হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন এ পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এ সময় উপস্থিত জেইউ আর্থ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক তামীম মোস্তারী বলেন, আজকে আমাদের এ আন্দোলন 'সেইভ আওয়ার ইনভায়রনমেন্ট' তথা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নিয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বিভিন্ন উন্নয়ন এবং অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণের ফলে জীববৈচিত্র্যের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। আমাদের চিন্তা সব সময় ইকোসেন্ট্রিক হতে হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ইকোসেন্ট্রিক চিন্তার অভাব রয়েছে। 

তিনি আরো বলেন, আমরা মোটেও উন্নয়নের বিপক্ষে নই। শিক্ষা ও গবেষণায় এগিয়ে যেতে আমাদের উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে তবে সেটা কেন পরিবেশকে ক্ষতি করে হবে?গাছপালা কেটে, বনভূমি ধ্বংস করে এবং জলাশয় ভরাট করে উন্নয়নের ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি সাধিত হচ্ছে।

আর্থ সোসাইটির সহ-সভাপতি শরিফুল ইসলাম সোহান বলেন, আজকে বন্ধ ক্যাম্পাসে আমরা প্রকৃতিপ্রেমী যারা আছি, খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে এক হয়েছি। একের পর এক আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন হচ্ছে তবে এই উন্নয়নগুলো টেকসই উন্নয়ন কিনা এটা চিন্তার বিষয়। পরিবেশকে বাঁচাতে টেকসই উন্নয়নের বিকল্প নেই। আজকের এ পরিবেশ আন্দোলনকে বহুমুখী এবং আরো জোরদার করতে আমাদের ছাত্র আন্দোলনের কর্মী দরকার, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কর্মী দরকার। কারণ যারা ব্যান্ড শিল্পী আছে তারা যদি আমাদের এই আন্দোলনকে গানে গানে তুলে ধরে, যারা অভিনয়শিল্পী আছে তারা যদি তাদের অভিনয়ে তুলে ধরে তাহলে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। আজ আমরা জাহাঙ্গীরনগরের পরিবেশ বাঁচাতে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান করছি।

পরিবেশবাদী সংগঠন আর্থ সোসাইটির সভাপতি শিমুল আহমেদ বাপ্পি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণ প্রকৃতি ও জীববৈচিত্রের জন্য সকলের কাছে পরিচিত। তবে অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণের ফলে অনেক গাছকাটা হচ্ছে, প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংসের মুখে পড়েছে। আমাদের ক্লাস রুম সংকট রয়েছে আগে থেকেই তবে তাই বলে পরিবেশের জন্য অনুকুল জায়গাগুলোকে ধ্বংস করে ওখানেই বহুতল ভবন নির্মাণ করতে হবে তা কিন্তু নয়! বিকল্প অনেক জায়গা ছিল যেখানে প্রকৃতির ক্ষতি ছাড়ায় বা ন্যূনতম ক্ষতি করে ভবন নির্মাণ করা যেত। আমাদের দাবি পরিবেশের যে ক্ষতি হয়েছে তা হয়তো আমরা ফিরিয়ে আনতে পারব না তবে পরবর্তীতে পরিবেশের এমন ক্ষতি যাতে না হয়, সেদিকে প্রশাসনের সুদৃষ্টি রাখতে হবে।

এর আগে, গত ২ জুন চারুকলা অনুষদ ভবন ও কলা ও মানবিকী অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের জন্য দুই শতাধিক গাছ কেটে সাইট ঘেরাওয়ের মাধ্যমে ভবন নির্মাণের সূচনা করে কর্তৃপক্ষ।