জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার কাজের শুরু থেকে মাস্টারপ্ল্যানের দাবিতে সামনের সারি থেকে আন্দোলন করে আসছিলেন ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাবেক সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী জয়। এ সময় তারা মাস্টারপ্ল্যানের দাবির এ আন্দোলনের নাম দিয়েছিল জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও। তবে বর্তমানে চলমান চারুকলা ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে পাল্টে গেছে তার সুর। এছাড়াও সম্প্রতি সময়ে প্রশাসনের কাছ থেকে সুবিধা নেওয়ার বিপরীতে মাস্টারপ্ল্যানের দাবি থেকে সরে আসার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ৪২ তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন জয় । তিনি ২০১৮ সালে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতিও ছিলেন নেই নেতা।
বর্তমানে ক্যাম্পাসে ছাত্র ইউনিয়নের দুটি গ্রুপ রয়েছে । একটি অমর্ত্য-ঋদ্ধ গ্রুপ আরেকটি আলিফ-ইমন গ্রুপ। তবে অমর্ত-ঋদ্ধ গ্রুপটির পিছন থেকে নেতৃত্ব দেন এই নেতা। অভিযোগ রয়েছে, অন্যান্য ভবনের ইস্যুতে এই গ্রুপটি সরাসরি বাধা প্রদান করলেও চারুকলা ভবন ক্ষেত্রে কোন বাধা প্রদান করেননি। আলোচনার মাধ্যমেই প্রতিবাদ সীমাবদ্ধ রেখেছিলো। সূত্র জানায়, জয়ের নির্দেশে এই গ্রুপটি চারুকলা ভবনের বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারিনি।
এদিকে চারুকলা ভবনকে ঘিরে তিনটি মিটিংয়ের আয়োজন করেন প্রকল্প পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক এম এম ময়েজউদ্দিন। প্রথম মিটিংয়ে আন্দোলনকারীরা মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ করলে ক্ষেপে যায় এই জয়। পরে এই নেতা সাংবাদিক, আন্দোলনকারীসহ অন্যান্যদের নানানভাবে বুঝাতে চেষ্টা করেন । দ্বিতীয় ও তৃতীয় মিটিং শেষেও তিনি একই কাজ করেছেন। সর্বশেষ এই নেতা ফেসবুকে পোস্ট দেয়। সেখানে তিনি মাস্টারপ্ল্যান ছাড়াই চারুকলা ভবনের পক্ষে সাফাই গায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রকল্প পরিচালক এম এম ময়েজ উদ্দিনকে সাথে নিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের আলিফ-ইমন গ্রুপ এবং জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের দুই শীর্ষ নেতা, সাংবাদিকদেরও বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন নেতা । তিনি সবাইকে এটা বোঝাতে চেষ্টা করেন কেনো চারুকলা ভবন করা জরুরি। কেন মাস্টারপ্ল্যাণের অপেক্ষায় থাকা যাবে না। তবে ছাত্র ইউনিয়নের আলিফ-ইমনকে বুঝাতে ব্যর্থ হন তিনি। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নিয়ে চরম আক্রোশমূলক পোস্ট করেন তিনি। তিনি এই পোস্টের মাধ্যমে মাস্টারপ্ল্যান ছাড়াই চারুকলা ভবন নির্মাণের পক্ষে প্রচারণা চালান। এতে সমালোচনার মুখে পড়েন জয়। নেই নেতার সমসাময়িক আন্দোলনকারীরা তাকে পল্টিবাজি বলে আখ্যায়িত করেন।
এছাড়াও অভিযোগ আছে, নজির আমিন জয় ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনিকে সাথে নিয়ে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আকতার মাহমুদকে 'ম্যানেজ' করেছেন। রাকিবুল রনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও আকতার মাহমুদের ঘনিষ্ঠ। এছাড়াও অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োডাইভার্সিটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব।
চারুকলা ভবন নির্মাণে অংশীজনদের নিয়ে সর্বশেষ আলোচনা সভায় অধ্যাপক আকতার মাহমুদকে উপস্থিত করা হয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের মাস্টারপ্ল্যানের দাবির প্রেক্ষিতে অধ্যাপক আকতার মাহমুদের মাধ্যমে আশ্বাস দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যানে চারুকলা অনুষদের ভবনকে অর্ন্তভুক্তি করা হবে।
এবিষয়ে নজির আমিন জয় বলেন, আমি বিন্দু পরিমাণেও আমার অবস্থান থেকে সরে আসি নি। আমি পূর্বেও যেমন মাস্টারপ্ল্যানের পক্ষে ছিলাম। এখনো চাই মাস্টারপ্ল্যান মেনেই সকল ভবন হোক। তবে যেখানে সব ভবন নির্মাণ হচ্ছে, সেখানে এই ভবন নির্মাণ করতে কেন দেয়া হচ্ছে না সেটা জানতে চেয়েছিলাম। আমি কখনোই প্রকৃতি ধ্বংসের পক্ষে নই। আর আমার সাথে তাদের তদবির বা এই রকম কোনো কথা হয় নি। আমি যেহুতু চাকরিই করব না সুতরাং তদবিরের প্রাশ্নই আসে না। আমি ফেসবুকে কি লিখলাম তার উপর ভিত্তি করে আমার আন্দোলনকে বা বর্তমান আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রশ্নবিদ্ধ করা উচিত নয়।
অভিযোগের বিষয়ে নগর ও অঞ্চল পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক আকতার মাহমুদকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি অভিযোগটিকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। এসময় তিনি বলেন, আমি সবসময়ই মনে করি মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা উচিত নয়। রনি আমার বিভাগের শিক্ষার্থী বিধায় তাকে আমি চিনি। তবে তার সাথে আমার এ বিষয়ে কখনো কোনো কথা হয় নি। চারুকলা ভবনের জন্য নির্ধারিত স্থান দেখানোর পরে আমি তাদেরকে জানিয়েছিলাম জায়গাটা সংবেদনশীল তবে এটাকে সিন্ডিকেট অনুমতি দেয়ার আমার বিশেষ কিছু করার নেই। এই ভবনসহ নতুন নির্মিত বেশিরভাগ ভবনকেই মাস্টারপ্ল্যান সম্বনয় করা কঠিন। যেহুতু এই ভবনগুলোকে ভেঙে ফেলার সুযোগ নেই সুতরাং এই সকল ভবনকে স্থান দিতেই হবে। তবে কারো তদবির সুপারিশ বা কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কোনো ভবনকে সংযুক্ত করার সুযোগ নেই।