গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় উপজেলা পরিষদ ভবন থেকে ৬০০ মিটার দূরত্বে একটি মালিকানা ভবনের নিচতলায় ভাড়াটিয়া হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে উপজেলা নির্বাচন অফিস (ইসি)। স্বল্প জায়গা এবং যাতায়াত পথ জটিল ও সরকারি বাসভবনের পিছনে নির্বাচন অফিস এর মত একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর যেন একেবারেই বেমানান।


বর্তমান নির্বাচন অফিসের দক্ষিণে রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘনবসতিপূর্ণ ঘরবাড়ি, উত্তরে সরকারি কর্মকর্তা দের বাসভবন , পশ্চিমে ঘন বনে আচ্ছাদিত জমি ও পূর্বে পুকুর (জলাশয়) এসবের মাঝে স্থানীয় এক ব্যাক্তির বাসা ভাড়া নিয়ে প্রায় ৬ বছর চলছে উপজেলা নির্বাচন অফিসের সকল কার্যক্রম যা ২০২০ইং, থেকে এখন পর্যন্ত চলমান।

৩ তলা বিশিষ্ট ভবনের নিচ তলায় ছোট্ট দুটি রুম ও একটি বারান্দা। সব মিলিয়ে জায়গার অভাবে জনসেবা কার্যক্রম চালাতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দের। ২০১৯ সালে পুরাতন নির্বাচন ভবন ভেঙে ফেলার পরে নতুন করে আর নির্বাচন অফিসের জন্য নিজস্ব ভবন বা কার্যালয় তৈরি করা হয়নি এমনকি উপজেলা পরিষদ ভবনে ও কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ভবনে সকল দপ্তর নিজস্ব কক্ষ পেলেও বঞ্চনার কাতারেই রয়ে গেছে নির্বাচন অফিস। নিজস্ব ভবন তৈরির জন্য জমি বরাদ্দ থাকলেও নানা সমস্যার কারণে সুরাহা মিলছে না। জনসেবায় দপ্তর  (নির্বাচন অফিস) টি জেলার মধ্যে অন্যান্য উপজেলা থেকে এগিয়ে থাকার কথা, কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের  সহযোগিতার অভাবে পিছিয়ে রয়েছে। 

জনসেবা ও নাগরিক সেবা দানে নির্বাচন অফিস অনন্য। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কে সামনে রেখে চলতি বছরে সরকারি বরাদ্দে হোক কিংবা উপজেলার নিজস্ব অর্থায়নে হোক, ভবন নির্মাণ কাজ শুরু না হলে অথবা ছোট্ট পরিসর থেকে বড় পরিসরে অফিস কক্ষের ব্যবস্থা না করলে নাগরিক সেবা ও ভোটার কার্যক্রম চরম ব্যাহত হবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। 

সংসদীয় আসন (গোপালগঞ্জ-৩)  এর আওতায় রয়েছে টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ এলাকা হ‌ওয়ায় বিগত নির্বাচন গুলো তে তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলো না আসন টি তে। তবে প্রতি বারের থেকে এবারের নির্বাচনী পরিবেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রথম সারির রাজনৈতিক দলীয় প্রার্থী ছাড়াও রয়েছে সতন্ত্র প্রার্থীর ছড়াছড়ি। এসব প্রার্থীদের মধ্যে টুঙ্গিপাড়ায় রয়েছে বেশ কয়েকজন। নির্বাচন কে কেন্দ্র করে এর‌ই মধ্যে বিভিন্ন দলীয় নেতা কর্মীদের আনাগোনা শুরু হয়েছে কার্যালয় টি তে। তবে অফিসে পর্যন্ত জায়গার অভাবে জনসেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে প্রায়শই।

এ ব্যাপারে নবাগত উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ হারুন অর রশিদ "সাংবাদিকদের" বলেন, উপজেলার মধ্যে নির্বাচন অফিস একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর। কিন্তু সেই গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর টি একটি ভাড়াটিয়া বাসায় পরিচালিত হচ্ছে, এটা নিতান্তই দৃষ্টিকটু। এখানে যাতায়াত পথ ও গোলক ধাঁধার মত বেশ জটিল। অনেক সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত সেবা ভোগীদের অফিস খুঁজে বের করতেই কষ্ট হয়। এ ছাড়াও নির্বাচন অফিস একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় নাগরিক সেবা মূলক দপ্তর। সুতরাং এটির পরিচালনা পদ্ধতি ও নির্দলীয় হতে হয়। কিন্তু ভাড়া করা বাসায় কার্যক্রম পরিচালনা করলে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। সুতরাং একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর হিসেবে নির্বাচন অফিসের নিজস্ব ভবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং নিতান্তই প্রয়োজন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও ) ফারজানা আক্তারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরাও ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। আমরা চেষ্টা করছি আপাতত নির্বাচন অফিসটি সরকারি কোন ভবনে স্থানান্তর করে কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য। সেই সাথে নিজস্ব ভবন তৈরির জন্য দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।