বৃদ্ধাশ্রমে থাকা বয়স্ক মানুষদের জন্য ঈদ মানে পুরনো স্মৃতি হাতড়ে বেড়ানো। প্রতিদিন কোনো রকমে পরিবারকে ভুলে থাকলেও এদিন মনে পড়ে খুব বেশি। ছেলে-মেয়েদের দেখা না পাওয়ায় বৃদ্ধাশ্রমের নতুন পাওয়া পরিবারের সাথেই চলে ঈদ উদযাপন। পরিবার ছেড়ে বৃদ্ধাশ্রমে থাকার ধারণাটি এখনও আমাদের সমাজে সহজ নয়। তাই বৃদ্ধাশ্রমে যাদের আশ্রয় হয়, তাদের অনেকেরই মন পড়ে থাকে পরিবারের সদস্যদের কাছে। অন্যান্য দিনের তুলনায় ঈদের দিনটি আলাদা করে কোন মানে রাখে না এই মানুষগুলোর কাছে। এই মা বাবাদের কাছে ঈদের দিনে সন্তানেরা আসেন না, তারাও যান না। তাই শত আয়োজনও ঠিক আনন্দ বয়ে আনে না তাদের কাছে।
রাজধানীর কল্যানপুরের চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার ওল্ড হোম ঘুরে দেখা মিললো এমনই পরিবার বঞ্চিত মা-বাবাদের। এই বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই হয়েছে ১৩৫ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধার। এখানেই কথা হলো সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা আতিউর রহমানের সাথে। বছর বিশেক আগে অবসরে যান তিনি। এককালীন পাওয়া টাকা দিয়ে বাড়ি বানালেও এতে ঠাঁই হয়নি তার। পরিবার-গ্রামের নানা জটিলতা এড়িয়ে বৃদ্ধাশ্রমই এখন তার ঠিকানা। তিনি বলেন, ‘না ছেলেরা আমার অযত্ন করেনি। গ্রামে ভিলেজ পলিটিক্স চলে, এটা আমি পছন্দ করি না। আর চাকরি করে পেনশনের কিছু পয়সাকড়ি পেলাম। এই জন্য সবাই আমাকে ওইদিকে টানতো।’
ঢাকায় ছেলের কাছে আশ্রয় চাইলেও স্থান হয়নি অসুস্থ আবুল খায়রের। এই বৃদ্ধাশ্রমেই তাই নতুন পরিবারের মাঝে খুঁজে ফেরেন জীবনের নানা প্রশ্নের উত্তর। তিনি বলেন, ‘গিয়ে খবর দিলো তবুও আমার ছেলে আসেনি। আমাকে নেয়নি। পুলিশও ফোন করেছে যে তোমার বাবাকে নিয়ে যাও এসে। বলেছে, আমার বাবা নেই।’ ঈদের দিন ওল্ড হোমটিতে ভাগ্যবিড়ম্বিত এই মানুষগুলোর জন্য পশু কোরবানী করা হয়েছে। ছিলো নতুন কাপড়ও। কিন্তু তারপরেও কোথায় যেন এক শূন্যতা।
ওল্ড হোমের প্রতিষ্ঠাতা মিলটন সমাদ্দার বলেন, ‘একটা সময় তাদের জীবনে অনেক কিছু ছিলো। চাওয়া পাওয়া ছিলো। সন্তানদের জন্য তারা অনেক কিছুই করেছেন। জীবনের শেষের দিকে এসে পরিবার সন্তান ছাড়া ঈদ। মানসিকভাবে তো তারা শান্তিতে নেই। তারা শান্তিতে না থাকলে তো আমিও শান্তিতে নেই।’ আত্নীয়-পরিবারহীন বা শেষ বয়সে ভাগ্যবঞ্চিতদের শেষ ভরসা বৃদ্ধাশ্রম। আর এর সকল বাসিন্দাই যেনো একে অপরের পরম আত্নীয়।