ভোলায় ৩ দফা দাবীতে অবস্থান, বিক্ষোভ এবং স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচী পালন করেছে সিএনজি মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ। সোমবার (১২ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ কর্মসূচী পালন করে তারা। অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচী শেষে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসক বরাবরে দাবী সম্বলিত এক স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা।
জানা গেছে, ভোলায় সিএনজি মালিক ও বাসের শ্রমিকদের সাথে দীর্ঘ কয়েকদিন যাবত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে একাধিকবার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে উভয় শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের নিয়ে মিমাংসায় বসা হলেও একপক্ষ মানলে আবার অপরপক্ষ তা মানছেন না। এভাবেই থেমে থমে চলে সিএনজি ও বাস শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা। সুযোগ বুঝে পালাক্রমে একপক্ষ অপর পক্ষের উপর হামলা চালানোর মতও ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হওয়ারও খবর পাওয়া গেছে। এদিকে সর্বশেষ সিএনজি ও বাস মালিকদের সাথে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বৈঠক শেষে সেখানে সিএনজি মালিকদের কিছু শর্ত দেয়া হয়। যা তারা প্রাথমিকভাবে মেনে নিলেও পরবর্তীতে দেখেন এতে তাদেরই লোকসান হচ্ছে। সিএনজি চালিয়ে তাদের জমা এবং কিস্তির টাকাই উঠছে না, কিভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে-পড়ে চলবেন। তাই এই শর্ত তারা মানতে পারেন নি। শর্তগুলো না মানতে পেরে সিএনজি মালিকরা এর থেকে পরিত্রান চেয়ে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করে তারা। কর্মসূচীর সফল করতে সিএনজি মালিকরা সকাল থেকে ভোলা জেলার সকল সিএনজিগুলো ভোলা সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে এনে জড়ো করে অবস্থান করতে থাকে। সেখানে সিএনজি মালিকরা বিক্ষোভ করতে থাকেন। এরপরে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যান। বিক্ষোভ মিছিলে সিএনজি মালিকদের শত শত মালিক অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও বিক্ষোভ মিছিল এবং স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচীতে জাতীয়তাবাদী সিএনজি-টেম্পু-অটোরিকশা শ্রমিক দলের উপদেষ্টা আহমেদ উল্লাহ দুলাল, জাতীয়তাবাদী সিএনজি-টেম্পু-অটোরিকশা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক পান্নুসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আবু জাফর, মোঃ হোসেন, লোকমান, সাকিবসহ একাধিক সিএনজি মালিক বলেন, বেশ কিছুদিন যাবত আমাদের সাথে বাস মালিক এবং শ্রমিকদের মাঝে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতবিরোধ চলছে। তারা আমাদেরকে ভোলা মহাসড়কে চলতে দিতে চাচ্ছে না। এ নিয়ে গত ৬ তারিখে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আমাদেরকে ৩টি শর্ত দিয়েছে। ওই শর্ত মানা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। কারণ তারা যেসকল শর্ত দিয়েছে তা মেনে আমরা যদি ৩ জন যাত্রী নিয়ে সড়কে চলাচল করি, তাতে আমাদের পোষাচ্ছে না। তারা আরো বলেন, আমাদের অধিকাংশ সিএনজি মালিকরা সিএনজিগুলো কিস্তির মাধ্যমে কেনা এবং কেউ কেউ জমা দেয়ার মাধ্যমে সিএনজি চালাচ্ছেন। এতে কিস্তি ও জমার টাকাই উঠছে না। তা হলে আমরা কিভাবে চলব, পরিচার পরিজন নিয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। তাই আমরা এই শর্ত মানি না।
তারা আরো বলেন, পরানগঞ্জ থেকে ইলিশা পর্যন্ত এই সড়কে সিএনজি চলাচলে বাস মালিক এবং জেলা প্রশাসন যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, এটা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কারণ ভোলায় কোন হাইওয়ে সড়ক নেই। তাই ওই সড়কে সিএনজি ছাড়া যদি অন্যান্য পরিবহণ চলতে পারে তা হলে সিএনজি কেন চলতে পারবে না ? আমরা এই শর্ত প্রত্যাখ্যান করলাম। আমাদের দাবী ভোলার ইলিশা থেকে দক্ষিণ আইচা পর্যন্ত আমাদের সিএনজি চলতে দেয়া হোক।
এছাড়া ভোলাতে যতগুলো সিএনজি রয়েছে যার প্রত্যেকটি-ই লাইসেন্সকৃত। আমরা সরকারের সকল নিয়ম-কানুন মেনে সড়কে গাড়ী চালাই, তা হলে আমরা কেন অবৈধ হব। বৈধ কাগজ-পত্র থাকা সত্ত্বেও আমাদের অবৈধ বলা হয় কেন ? তাছাড়া আমাদেরকে হয়রানি করার জন্য বাস মালিক-শ্রমিকদের প্ররোচনায় ট্রাফি সদস্যরা নানাভাবে হয়রানি করছে। এমনকি নানা ছলে আমাদেরকে জরিমানাও করা হয়, যা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এর থেকে পরিত্রাণ চাই। আমাদের দাবীগুলো যদি মেনে নেয়া না হয়, তাহলে আমাদের আন্দোলন চলবেই---চলবে।
সিএনজি-টেম্পু-অটোরিকশা মালিক সমিতির নেতা মাকসুদুর রহমান বলেন, আমারা ৩ দফা দাবী নিয়ে সিএনজি মালিক সমিতির লোকজন ভোলা সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে সিএনজি নিয়ে অবস্থান, বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছি। আমরা আমাদের দাবীগুলো লিখিত আকারে তুলে ধরে জেলা প্রশাসকের বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছি। আমরা আশা করবো জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাদের দাবীগুলো পুনরায় বিবেচনায় আনবেন। আমরা পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয় হবে।
জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হোসেন তালুকদার বলেন, বিগত বছরগুলোতে যেভাবে সিএনজি চলেছে, এখনও সেই ভাবেই চলবে। কোন ফ্যাসিস্ট যদি সিএনজি মালিক-শ্রমিকদে অন্তরালে থেকে থাকেন তা হলে তাকেও বরদাস্ত করা হবে না। সিএনজি আগে যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলবে, এর ব্যাত্যয় ঘটলে তা মেনে নেয়া হবে না।