নওগাঁর মান্দা উপজেলার কুড়িয়াপাড়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও জাল স্বাক্ষরের অভিযোগ উঠেছে। তিনি অবৈধভাবে গঠিত এডহক কমিটি বাতিলের উদ্দেশ্যে কমিটির দুই সদস্যের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া পদত্যাগপত্র দাখিল করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. রজৌল নবী। এ বিষয়ে তিনি গত সোমবার জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, চলতি বছরের ৬ মার্চ মাদ্রাসার একটি এডহক কমিটি অনুমোদন করে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। পাঁচ দিন পর, ১১ মার্চ সুপার জিয়াউর রহমান মাদ্রাসার সভাপতি মো. রজৌল নবীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রারের কাছে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। একইসঙ্গে, শিক্ষকমণ্ডলীর প্রতিনিধি হাফিজুর রহমান ও অভিভাবক সদস্য মো. বাবুল হোসেনের নামে ভুয়া পদত্যাগপত্র দাখিল করে কমিটি বাতিলের আবেদন করেন তিনি।
অভিযোগে বলা হয়, সুপার জিয়াউর রহমান সংশ্লিষ্ট দুই সদস্যের স্বাক্ষর জাল করেছেন। সরেজমিনে মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, ২৪ মে অনুষ্ঠিত এক সভায় শিক্ষক, কর্মচারী ও কমিটির সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমান কমিটি বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেন। এর আগে, সুপারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে ২১ মে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
শিক্ষক-কর্মচারীদের ভাষ্যমতে, সভাপতির বিরুদ্ধে সুপারের উত্থাপিত চাঁদাবাজির অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। তারা বলেন, “সভাপতি টাকা চেয়েছেন—এমন কথা কখনও শুনিনি। তবে সভাপতির তালিকা পাঠানো নিয়ে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।”
অভিযোগে থাকা পদত্যাগপত্রে শিক্ষকের স্বাক্ষর সম্পর্কে জানতে চাইলে হাফিজুর রহমান বলেন, “আমি স্বাক্ষর করিনি।” পরে স্বাক্ষর মিলিয়ে দেখা যায়, পদত্যাগপত্রের স্বাক্ষরের সঙ্গে তাঁর বর্তমান স্বাক্ষরের কোনও মিল নেই। অভিভাবক সদস্য বাবুল হোসেনও বলেন, “আমি কমিটি থেকে পদত্যাগ করিনি।”
সুপার জিয়াউর রহমান বলেন, “তিনি (সভাপতি) আমাকে বলেছিলেন, কমিটি গঠনের জন্য অনেক টাকা খরচ হয়েছে, তাই টাকা দিতে হবে। তবে তার দাবির পক্ষে আমার কাছে কোনও প্রমাণ নেই এবং আমি বিষয়টি কাউকে জানাইনি।”
মাদ্রাসার সভাপতি মো. রজৌল নবী বলেন, “এই ধরনের জালিয়াতি শুধু আইনবিরোধী নয়, এটি প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ও শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি চরম অবজ্ঞা। আমি সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।”

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলম শেখ বলেন, “মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তদন্তের জন্য একটি চিঠি দিয়েছে। আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং আমি দ্রুত তদন্ত করে প্রতিবেদন দেব।”
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, “এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”