প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেখেছি রেলকে নিয়ে নানা খেলা চলেছে। জাতির পিতাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যার পর অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে মিলিটারি ডিকটেটররা ক্ষমতা দখল করেছিল। তারা আসলে এ দেশের কোনো মঙ্গল চায়নি, উন্নতিও চায়নি, যার কারণে সাধারণ মানুষের যে পরিবহন ছিল, একে একে সবই ধ্বংস করার চেষ্টা করে। এমনকি রেল লাভজনক না, এই অজুহাতে বন্ধ করে দেয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয়। লাভজনক নয় বলে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার রেল বন্ধের অপচেষ্টা করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে পাবনার রূপপুর, গাজীপুরের জয়দেবপুর ও কুমিল্লার শশীদল থেকে তিনটি রেলপথে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে রেলপথে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করেন। সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা দেখেছি রেলকে নিয়ে নানা খেলা চলেছে। জাতির পিতাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যার পর অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে মিলিটারি ডিকটেটররা ক্ষমতা দখল করেছিল। তারা আসলে এ দেশের কোনো মঙ্গল চায়নি, উন্নতিও চায়নি, যার কারণে সাধারণ মানুষের যে পরিবহন ছিল, একে একে সবই ধ্বংস করার চেষ্টা করে।

‘এমনকি রেল লাভজনক না, এই অজুহাতে বন্ধ করে দেয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয়। রেলের লোকবল গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে বিদায় দেয়া হয়। অনেক রেললাইন বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। সর্বশেষ বিএনপি-জামায়াত সরকার, অর্থাৎ যখন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী ছিল, তখন এটা করা হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘যারা বিরোধিতা করেছিল তারাই এখন প্রস্তাব দেয় যমুনায় নতুন রেল সেতু করতে। তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সড়ক সেতুর সঙ্গে আমরা রেল সেতু করে দিই। যারা একসময় এর বিরোধিতা করেছিল, আবার তারাই প্রস্তাব দেয় নতুন রেল সেতু করতে। রেল খাতের উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার সারা দেশে রেল যোগাযোগ স্থাপনে কাজ করছে।

গত ১৪ বছরে ৬৫০ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। ২৮০ কিলোমিটার মিটারগেজকে ডুয়ালগেজে রূপান্তর, ১ হাজার ২৯৭ কিলোমিটার লাইন পুনর্বাসন-পুনর্নির্মাণ করেছি। ১২৬ নতুন স্টেশন ভবন ও ২২৩টি স্টেশন ভবন পুনর্বাসন-পুনর্নির্মাণ করেছি। ‘৭৩২টি নতুন রেল সেতু, ৭৭৪টি রেল সেতু পুনর্বাসন-পুনর্নির্মাণ এবং ৫০টি ব্রডগেজ ও ৫০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী কোচ পুনর্বাসন করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ১০৬টি লোকোমোটিভ, ২০ সেট ডিইএমইউ, ৫৩৫টি যাত্রীবাহী ক্যারেজ এবং ৫১৬টি মালবাহী ওয়াগন সংগ্রহ করেছি। ১৩০টি স্টেশনে সিগন্যালিং ব্যবস্থার উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করেছি।

ইতোমধ্যে ৪৪টি নতুন এবং বর্ধিত রুটে মিতালী এক্সপ্রেসসহ মোট ১৪২টি নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে। দেশের রেল যোগাযোগ বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণে কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমরা নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করেছি এবং পদ্মা সেতুতেও ঢাকা থেকে যশোরের রূপদিয়া ও সিঙ্গিয়া পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ দ্রুত এগিয়ে চলছে। কক্সবাজারের মানুষের বহু দিনের প্রত্যাশা ছিল রেললাইন হবে। দুর্ভাগ্যের বিষয় এটা কেউ উদ্যোগ নেয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারে এসে উদ্যোগ নিয়েছে। আজকে কক্সবাজারের দুটি ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আমি আশা করি, দ্রুত এটা শেষ হবে।

তিনি বলেন, ‘আখাউড়া-লাকসাম ডুয়েলগেজ ডাবল-লাইন নির্মাণ, ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর ডুয়েলগেজ ডাবল-লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ একসময় রেল যোগাযোগ ছিল। মাঝখানে সেটা প্রায় বন্ধ...আমরা আবার চালু করেছি। ‘ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডুয়েলগেজ লাইন, ভাঙ্গা-বরিশাল-পায়রা বন্দর রেললাইন, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন, খুলনা-দর্শনা ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন, সিরাজগঞ্জ-বগুড়া ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। তা ছাড়া, জয়দেবপুর- ময়মনসিংহ-জামালপুর ডুয়েলগেজ ডাবল-লাইন, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র রেল-লিংক, আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন, ধীরাশ্রম আইসিডি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।