বেনাপোলে বেকরত্বের সংখ্যা দিন দিন আশঙ্কজনক হারে বাড়ছে। সম্প্রতি সীমান্ত শহর বেনাপোল অঞ্চলে বিভিন্ন ভাবে জরিপ করে দেখা যাচ্ছে এই এলাকায় উদ্বেগজনক ভাবে বাড়ছে বেকারের সংখ্যা যা দৃশ্যমান। এখানে কর্মসংস্থান যেমন শিল্প কলকারখানা না থাকায় বেকারত্বের একটি বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি ভারত ভিসা বন্ধ করায় আস্তে আস্তে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় এর প্রভাব পড়ছে পরিবহন সেক্টর, শ্রমিক ও এখানকার সহস্রাধিক দোকানপাটের। যার ফলে সম্প্রতি চুরি ডাকাতি ও ছিনতাই বেড়েছে।
রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহর থেকে সীমান্তবর্তী বেনাপোল শহরে প্রতিদিন বিভিন্ন পরিবহন প্রবেশ করত। আর পরিবহনে ভারতগামী যাত্রী সাধারনত ভারতে বেনাপোল ইমিগ্রেশন হয়ে চিকিৎসা, ব্যবসা বানিজ্য, ভ্রমন ভিসায় যাতায়াত করে। আর এই যাত্রীদের নিকট থেকে দুরপাল্লার পরিবহন ছাড়া ও এখানকার ইজিবাইক বিভিন্ন মানিচেঞ্জার অফিস এবং কিছু এন্টারপ্রাইজ নামে দোকানদার,শ্রমিক ও আয়ের উৎস হিসাবে জড়িত। এরা ভারতে যাওয়ার সময় তাদের পরিচিত কাউন্টারে আসে। সে ক্ষেত্রে ওই সব দোকানদার তাদের মেহমানদের ব্যাংকের ট্যাস্ক বিশ্রাম চা নাস্তা এনে দেওয়ার কাজ করে থাকে। সে ক্ষেত্রে দুর থেকে আসা যাত্রীরা খুশি হয়ে বকশিস দিয়ে যায়। তারপর টাকা চেঞ্জ সহ তাদের সহযোগিতা করত। আবার তাদের মালপত্র বহনের কাজ করে থাকে এখানকার কুলি। তারাও নোম্যান্সল্যান্ডে তাদের ল্যাগেজ এগিয়ে দিয়ে ও পারিশ্রমিক পায়। আবার অনেক পাসপোর্ট যাত্রী ভারত থেকে আসার পথে তাদের ল্যাগেজ সুবিধা অনুযায়ী কিছু পণ্য নিয়ে আসে। এর মধ্যে অধিকাংশ যাত্রী তাদের খরচ পোষানোর জন্য এসব পণ্য বেনাপোল এর চেকপোষ্টের দোকানে বিক্রি করে চলে যায়। আবার অনেক যাত্রী একটু বেশী বিক্রি করার জন্য নিজ নিজ এলাকায় চলে যায়।
এছাড়াও ভারত থেকে ও আসে ভারতীয় পাসপোর্ট যাত্রী। তারাও তাদের ল্যাগেজ সুবিধা অনুযায়ী বিভিন্ন পণ্য এনে বেনাপোল যশোর ঝিকরগাছা খুলনা সহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে চলে যায়। ভারতীয় পণ্যর চাহিদা থাকায় এসব ব্যবসার উপর ঝুকে বসেছে অনেকে । এখন সেই সব লোক এবং তাদের দোকানের কর্মচারীরা বেকার। এছাড়া ও ভারতের সাথে সম্পর্কের অবনতির কারনেও আমদানি রফতানি বানিজ্যও অনেক হৃাস পেয়েছে। ফলে এর প্রভাব এই অঞ্চলের মানুষ সহ দেশের সকল জেলায় প্রভাব পড়ছে।
বেনাপোল শার্শার সীমান্ত এলাকা ছিল প্রায় ১২০ কিলোমিটার। এক সময় এই অঞ্চলের মানুষ ভারত বাংলাদেশের মানুষ পাচার (ধুড় ) চোরাচালানি পণ্য গরু শাড়ি, থ্রিপিছ, কসমেটিক্স, বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য, মদ, ফেনসিডিল এনে জীবন জীবিকা নির্বাহ করত। কালের পরিক্রমায় ভারত কাটাতারের বেড়া দেওয়ায় এবং সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিংস্র ভুুমিকা পালন করায় সে সব ব্যবসাও বন্ধ। এর পর আস্তে আস্তে এসব চোরাচালিনীদের একটি অংশ পাসপোর্ট এর মাধ্যেমে ভারত থেকে বিভিন্ন পণ্য এনে জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে ভারত ভিসা বন্ধ করায় সেসব ব্যবসা ও সিকেয় উঠে মহাবেকার হয়ে পড়েছে এখানকার নারী পুরুষ।
বেনাপোল চেকপোষ্ট ইমিগ্রেশন ওসি ইলিয়াছ হোসাইন মুন্সি জানান, ভিসা জটিলতার কারনে ভারতে যাতায়াত অনেক হ্রাস পেয়েছে। আগে যেখানে প্রতিদিন ১০/১২ হাজার পাসপোর্ট যাত্রী যাতায়াত করত। সেখানে এখন মাত্র ৫ থেকে ৬ শত যাত্রী আসা যাওয়া করে থাকে। কোন সময় এর চেয়েও কম যাতায়াত করে। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ও অনেক কম হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বেনাপোল চেকপোষ্টর আলম মানিচেঞ্জার এর মালিক মশিয়ার রহমান বলেন, পাসপোর্ট যাত্রী কমে যাওয়ায় আমাদের ব্যবসা ও হৃাস পেয়েছে। আমরা ভারত যাতায়াতকারী পাসপোর্ট যাত্রীদের নিকট টাকা পয়সা ডলার চেঞ্জ করার কাজ করতাম, বাংলাদশে ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে । এখন সে সব ব্যবসা বন্ধের উপক্রম হয়ে বেকার হয়ে পড়েছি।