ভোলায় কৃষি খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে তরমুজ। অনুকূল আবহাওয়া, উন্নত কৃষি প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং কৃষি বিভাগ ও এনজিওগুলোর কার্যকর সহায়তায় এবার রেকর্ড পরিমাণ তরমুজ উৎপাদিত হয়েছে। সুস্বাদু ও রসালো তরমুজে ভরে গেছে স্থানীয় বাজার, যা রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেটসহ দেশের অন্তত ১২টি জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। ভালো ফলন পেয়ে যেমন খুশি চাষি, তেমনি রোজায় তরমুজ পেয়ে ক্রেতারাও খুশি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভোলার ৭উপজেলায় এবার ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩৫ হাজার কৃষক তরমুজ চাষ করেছেন, যা থেকে উৎপাদিত হবে প্রায় সাত লাখ দুই হাজার টন তরমুজ। অধিদপ্তরের তথ্যমতে, প্রতি হেক্টর জমিতে ৫২ থেকে ৬০ টন তরমুজ উৎপাদিত হচ্ছে, যার সম্ভাব্য বাজারমূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। জানা গেছে, এ বছর অনুকূল আবহাওয়া ও উর্বর মাটির পাশাপাশি আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতির কারণে তরমুজ চাষিরা পেয়েছেন আশাতীত ফলন। গত বছরের কিছুটা প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ক্ষতির পর এবার বাম্পার ফলন কৃষকদের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তবে চাষিরা বলছেন, আরো একমাস যদি আবহাওয়া পুরোপুরি অনুকূল থাকে তাহলে পূর্বের লোকসান কাটিয়ে অনেকটা সঞ্চয় করতে পারবে। আর যদি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় তাহলে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাজারে তরমুজের চাহিদা ও ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় চাষিদের স্বস্তি এনে দিয়েছে। ফলে তারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন ফসল সংগ্রহ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণের কাজে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোলা সদরের মাঝের চরে তরমুজের ব্যাপক ফলন হয়েছে। ওই চরের তরমুজ চাষী আবু তাহের জানান, তিনি ৪ একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। এবার ব্যাপক ফলন হয়েছে। বিশেষ করে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কোনো চারাগাছ ক্ষতি না হওয়ায় তরমুজে লাভের পাল্লা এখন ভারী। এদিকে ভেলুমিয়ার বাঘমারা চরে দেখা গেছে, ওইখানকার বিস্তীর্ণ ভূমিতে তরমুজ খেতে হাজার হাজার তরমুজে সয়লাব।ওই চরের চাষি নজরুল ইসলাম জানান, এবার মৌসুমে ১৮ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। এতে বীজ ক্রয়, রোপণ, কীটনাশক ও রক্ষণাবেক্ষণ সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে আট লাখ টাকা। প্রচুর শ্রম, পরিচর্যা এবং আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে থাকায় তরমুজের ব্যাপক ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যেই তার মূল পুঁজির তিন ভাগ উঠে এসেছে। এবার মৌসুমে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চরাঞ্চলে তরমুজের সবচেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বিভিন্ন এনজিও বিশেষ করে গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার (জিজেইউএস) কার্যকর সহায়তা কৃষকদের সাফল্যে রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. শামীম আহমেদ বলেন, এবারের তরমুজ উৎপাদন ভোলার কৃষি খাতে একটি মাইলফলক। কৃষকরা আধুনিক প্রযুক্তি ও সঠিক কৃষি ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করায় ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরো বলেন, আদ্রতাসহ আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ বছর তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর ভোলায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের টার্গেট ছিলো তার মধ্যে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ উৎপাদন করা হয়েছে।এ সাফল্য ভবিষ্যতে তরমুজ চাষকে আরও প্রসারিত করবে। অত্যন্ত লাভজনক ফলন ও বাজারমূল্যের কারণে কৃষকদের মধ্যে তরমুজ চাষে নতুন আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এ বছর কৃষকদের সাফল্য শুধু তাদের জীবনমান উন্নত করবে না, বরং ভোলার অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চারসহ সম্ভাবনাময় কৃষি খাতকে আরও সমৃদ্ধ করবে।