সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত মাটি কাটার প্রকল্পে নাম
অন্তর্ভুক্ত করতে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার
খাতামধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ও কয়েকজন ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। অভিযোগ
রয়েছে, তালিকাভুক্ত হতে হলে ৫ হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে হচ্ছে, অন্যথায়
আগের তালিকা থেকেও বাদ দেওয়া হচ্ছে অসহায় সুবিধাভোগীদের।
সোমবার (১২ মে) দুপুর ১২টায় এ অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে উপজেলা
পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগী শতাধিক নারী-পুরুষ। ঘণ্টাব্যাপী এ
কর্মসূচিতে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রকৃত দরিদ্রদের বাদ দিয়ে
স্বজনপ্রীতি ও টাকার বিনিময়ে তালিকায় নাম তোলা হচ্ছে।
৮ নম্বর ওয়ার্ডের মোছা. সাথী বলেন, “আমি মাটিকাটার একজন প্রাপ্তভোগী,
মাত্র দুই বছর কাজ করেছি। এখন বলা হচ্ছে আগের তালিকা বাতিল এবং নতুন করে
অনলাইনে নাম দিতে হলে ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। যারা টাকা দিতে পারছে,
তাদের নাম অনলাইনে তোলা হচ্ছে, আর আমাদের বাদ দেওয়া হচ্ছে।”
একই ওয়ার্ডের আফসার আলী অভিযোগ করে বলেন, “গত মেয়াদে তার স্ত্রী নুর
বানুর নামে মেম্বার মেরিনা ও তার স্বামী ফজলার রহমান কার্ড করে টাকা তুলে
নিয়েছেন। সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ হলে কার্ড ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
এখন আবার হুমকি দিচ্ছেন, যে কোনো মূল্যে তাদের কার্ড বাতিল করে দেবেন।”
৫ নম্বর ওয়ার্ডের রেনু বালা জানান, “সচিব বলছেন, আগের কাউকে নেওয়া হবে
না। তবে টাকা দিলে নতুন করে অনলাইনে আবেদন করে দেবেন। হাতে হাতে ১৫-২০টা
নাম তোলার সুযোগ আছে, কিন্তু প্রতিটির জন্য ঘুষ দিতে হবে।”
এভাবেই মৃত বছির উদ্দিনের ছেলে সোলাইমান, ওয়ার্ড সর্দার নাজবুর রহমান
নিভেল, বিকাশ চন্দ্র রায় প্রমুখ একই অভিযোগ তোলেন। তারা বলেন, হালনাগাদের
নাম করে দুর্নীতির মাধ্যমে দরিদ্রদের প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা
হচ্ছে। যারা টাকা দিতে পারছে না, তাদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে, যা চরম
বৈষম্য এবং মানবিক অধিকার লঙ্ঘন।
এ বিষয়ে ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যরা জানান, তাদের এলাকা থেকে নাম কম
রয়েছে এবং তারা নিজেদের এলাকার প্রাধান্য দিয়ে কাজ করতে চান। টাকা নেওয়ার
বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সংরক্ষিত নারী মেম্বার মেরিনা এবং তার স্বামী অভিযোগ সম্পর্কে কিছু বলতে
অস্বীকৃতি জানান এবং সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান।
অন্যদিকে ইউপি সচিব রহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী কাজ
করছি। এখনও কাউকে বাদ দেওয়া হয়নি। সবাইকে নতুনভাবে আবেদন করতে বলা হয়েছে।
টাকা নেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।”
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. লুৎফর রহমান বলেন, “ইউএনও মহোদয়ের নির্দেশনায়
তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। প্রমাণ ছাড়া কাউকে অভিযুক্ত করা ঠিক নয়। তবে
অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয়দের দাবি, অবিলম্বে এ অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের শাস্তির
আওতায় আনতে হবে, না হলে বড় ধরনের আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন তারা।