রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার মাঠগুলোতে নতুন নতুন জাতের ধান চাষাবাদে কৃষকের মুখে হাসি দেখা গেছে। গত বছর পরিক্ষামূলক বেশকিছু নতুন জাতের ধান চাষ করলেও চলতি বোরো মৌসুমে বেশ কিছু জমিতে এইসব নতুন জাতের হাইব্রিড ধান চাষ করা হচ্ছে।
বালিয়াকান্দিতে বোরো ধানের ফলন ভাল হলেও হাইব্রিড সব ধান চাষে আগ্রহী কৃষকরা। প্রোটিন সমৃদ্ধ জাতের ধান চাষবাদ হচ্ছে জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার মাঠগুলোতে। ভাল ফলনের আশায় বোরো মৌসুমে বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করে আসছিলো কৃষকরা। তবে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট আগাম জাতের ধানের বীজ তুলে দিয়েছে কৃষকদের হাতে। যা কম সময়ে ভাল ফলন ও পুষ্টি বেশি। আগাম জাতের ধানের চাহিদাও সবসময় বাজারে বেশি হয়ে থাকে। এই জন্য আগাম জাতের ধান চাষ করতে উৎসাহী কৃষকরা।
কৃষক আরশেদ আলী জানান, গত বছর সামান্য জমিতে নতুন জাতের হাইব্রিড ধান লাগিয়ে ভাল ফলন হয়েছিলো। এইজন্য এবছর দুই-তিন পাখি জমিতে এই ধান লাগিয়েছি এবং প্রতি পাখিতে ২০ মণ করে ধান পাওয়া গেছে। আর নতুন জাতের ধানটি চিকন হওয়ায় অন্যান্য ধানের চেয়ে পাখি প্রতি ৪/৫ মণ বেশি হয়ে থাকে। আর ধান লাগানো থেকে ১৪০ দিনের মধ্যে পেকে যায় এ ধানটি। আমি এরই মধ্যে ঘরে তুলেও ফেলেছি।
আরেক কৃষক রিয়াজুল ইসলাম জানান, আগাম জাতের এই ধান চাষ করে একই সাথে কয়েকটি ক্রিয়া ফসল করা যাবে। আগাম জাতের ধানে কোন ধরণে চীটা এবং পোকার আক্রমণ চোখে পড়েনি। আর এই নতুন জাতের ধান কাটার পরে ওই জমিতে আউশ ধান লাগানো সম্ভব। আর আউশ কাটার পরপরই রবি শস্য আলু, ভুট্টা, সরিষা ও আখ চাষবাদ করা যাবে। এই জন্য আমার নতুন জাতের ধানটি আগামী বছর আরো চাষ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, জেলায় গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকজন কৃষকের মাঝে নতুন জাতের ধান বীজ দেয়া হয়। আর তা ভালো ফলনও পাওয়া যায়। এই থেকে কৃষকদের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া পড়তে থাকে। এখন থেকে এ ধানের বীজ পাওয়ার জন্য অনেক কৃষক নিবন্ধন করেছে।
তিনি আরো বলেন, এবার উপজেলায় ৫শ ৩০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধান চাষাবাদ করা হয়। ফলন প্রতি পাখিতে গড়ে ২০ মণ। অন্য জাতের ধানের তুলনায় ৪/৫ মণ বেশি ধান পাওয়া যায়। যার পাখিপ্রতি উৎপাদিত ধান থেকে বাড়তি দাম ৩-৪ হাজার টাকা।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে যেসব ধান চাষ করা হয়েছে তারমধম্যে রয়েছে, বোরোধান হাইব্রিড টিয়া ২৫ হেক্টর, এসএল ৮ এইচ ৬৫ হেক্টর, বায়ার তেজ গোল্ড ১২ হেক্টর, ধানীগোল্ড ১৩ হেক্টর ও সিনজেনটা ১২০৩ জাতের ধান ০৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। উপজেলায় হাইব্রিড জাতের মোট ধান চাষ হয়েছে ১২০ হেক্টর জমিতে।
অপরদিকে বোরোধান উফশী'র মধ্যে ব্রীধান ২৯ দশ হেক্টর, ব্রীধান ৫০ এক হেক্টর, ব্রীধান ৫৮ এক হেক্টর, ব্রীধান ৭৪ বার হেক্টর, ব্রীধান ৮৮ দুই সেক্টর, ব্রীধান ৮৯ দুই শত হেক্টর, ব্রীধান ৯২ একশত পাঁচ হেক্টর, ব্রীধান ৯৬ তিন হেক্টর, ব্রীধান ১০০ দুই হেক্টর, ব্রীধান ১০২ এক হেক্টর, ব্রীধান ১০৪ এক হেক্টর ও বিনাধান ২৫ বিয়াল্লিশ হেক্টর। বোরোধান উফশী জাতের ধান মোট চাষ হয়েছে ৪১০ হেক্টর জমিতে। সবমিলিয়ে উপজেলায় মোট ৫৩০ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হয়েছে।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোঃ শহিদুল ইসলাম জানান, আগামী বছর বোরো মৌসুমে অন্যান্য ধানের সাথে ব্রি-৮১ জাতের ধানটি ৩০ থেকে ৪০ ভাগ সম্প্রসারণ করা হবে। আর এ জাতের ধান জেলার জন্য সম্পূর্ণ উপযোগী। নতুন জাতের ধান চাষ করার জন্য কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করার কথাও বলেন তিনি।
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, জিরা হাইব্রিট ধান থেকে বীজ না হওয়ায় রাজবাড়ীর দু' একটি জায়গায় ব্রি-৮১ জাতের নতুন ধান কৃষকদের মাঝে পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করানো হচ্ছে। যাতে বীজ ও ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে বালিয়াকান্দিতে এটার চাষ এখনো নিয়মিত নয়। এ জাতের ধান থেকে প্রতি পাখিতে ২০-২১ মণ ধান পাওয়া যাবে। উৎপাদন বাড়ানো এবং কৃষক যাতে বীজ থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এ জাতের ধান আবিস্কার করা হয়েছে। কৃষকরা উৎপাদন ও দামের দিক থেকে লাভবান
হবেন। আর ভোক্তা যারা তারাও লাভবান হবেন।
মিনিকেটের মতো অনেক সরু চাল বাজারে পাওয়া যায়। সেই চালগুলোকে মেশিনে দিয়ে সরু করে বাজারজাত করা হয়ে থেকে। কিন্তু ব্রি-৮১ নতুন জাতের চাল জন্ম থেকে সরু ও চিকন। মিনিকেট চালের বিপরীতে এই চাল খেতে পারবেন ভোক্তা পর্যায়ে মানুষগুলো। আর ধান থেকে যে চাল উৎপাদন হবে এতে প্রোটিন থেকেই যাবে। মেশিনে ছাটায় করা চালে থাকবে না। এইজন্য এ নতুন জাতের ধানের দিন দিন বাজারে চাহিদা বেড়েই চলছে।
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর, বহরপুর, নবাবপুর, জঙ্গল, জামালপুর, বালিয়াকান্দি সদর ও নারুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে বোরোধান কর্তন করা হচ্ছে। মাঠ এবছর বোরোধানের ভাল ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে।a