বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) তাপসী রাবেয়া বসরি ছাত্রী হলের কর্মকর্তা বরুণ কুমার দে’র বিরুদ্ধে এক নারী সহকর্মীর বাসায় ‘অপকর্মে লিপ্ত’ থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ প্রকাশের ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক বাকি বিল্লাহ । এমন অভিযোগ তুলেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নিজেই। 

রবিবার (২০ জুলাই) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখে এক নারী সহকর্মীর ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটে। তবে ঘটনার সময় নারী কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসে কর্মরত ছিলেন। ঐ নারীর নিরাপত্তার স্বার্থে সংবাদে নাম প্রকাশ করা হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, কর্মকর্তা বরুণ কুমার দে নারী সহকর্মীর বাসায় অবস্থান করছেন এমন খবর পেয়ে সাংবাদিক বাকি বিল্লাহ এবং তার বন্ধু যাবের আকন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন । তারা দরজায় কড়া নাড়েন, তবে ভেতরে থাকা কর্মকর্তা শুরুতে দরজা খুলে দেননি । পরে তিনি তার পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাইনুল ইসলামকে ফোনে ডাকেন । মাইনুল উপস্থিত হলে তিনজন একসঙ্গে কক্ষে প্রবেশ করেন এবং তাদের মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডা হয় ।

এ সময়ের একটি ২২ মিনিটের অডিও রেকর্ড প্রতিবেদকের হাতে আসে। যেখানে বরুণ কুমার দে,বাকি বিল্লাহ,যাবের আকন, মাইনুল ইসলাম ও নিরাপত্তাকর্মীর কথোপকথন শুনা গেছে। সেখানে বরুণ কুমারকে একেক সময় একেক কথা বলতে শোনা যায়। এবং সাংবাদিক ও তার বন্ধু যাবের এর প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেন নি বরুণ কুমার। 
বরুণ কুমার দে বলেন ,“আমি সকাল ৯ টা ৪০ মিনিটে এ বাসায় আসি । আমি ওয়াশরুম করতে এসেছি।” 

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐ নারী কর্মকর্তা বলেন ভিন্ন কথা । তিনি বলেন, “আমি আমার ছুটি মওকুফের চিঠিটা বাসায় ভুলে ফেলে আসি। ঐ কর্মকর্তা আমার বাসার ঐদিকে আছে জানতে পেরে উনাকে আমার বাসা থেকে চিঠিটা নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করি। চিঠি আনতেই উনি আমার বাসায় গিয়েছিলেন। 

এসময় তিনি আরো বলেন, বিষয়টি নিয়ে যে সমস্ত বিভ্রান্তকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে তা অনভিপ্রেত ও আমার জন্য মানহানীকর। এবং যারা আমার এই মানহানি কর সিচুয়েশন তৈরি করছে প্রয়োজনে আমি আইনগত ব্যবস্থা নিব মানহানির মামলা দিব।”


ববি কর্মকর্তা বরুণ কুমার দের অভিযোগ, ঘটনাটি গোপন রাখার শর্তে তার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে। চাঁদা দাবির বিষয়টি সত্য বলে জানিয়েছেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাইনুল ইসলাম। মাইনুল ইসলাম জানান,  সাংবাদিক বাকি বিল্লাহ তাকে ১ লাখ টাকায় বিষয়টি মিমাংসার প্রস্তাব দিয়েছে।  তবে কর্মকর্তা বরুণ কুমার দে কোনো ধরনের অর্থ দিতে রাজি হননি বলে জানান।

ঘটনা জানতে চাইলে মাইনুল ইসলাম বলেন, প্রায় আনুমানিক বেলা ১টার দিকে ফোন পেয়ে আমি বাসায় যাই। গিয়ে দেখি সাংবাদিক বাকি ও তার বন্ধু যাবের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐ কর্মকর্তা ভিতর থেকে দরজা খুলে দিলে ভিতরে প্রবেশ করি। ভিতরে ঐ কর্মকর্তা অফিসিয়াল পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখতে পাই ৷ এ সময় সাংবাদিক বাকি ও যাবের পুরো বাসায় তল্লাশি চালান। তাদের দাবি এই বাসাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী কর্মকর্তার কিন্তু ঐ বাসায় ঐ কর্মকর্তা ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি। সাংবাদিক বাকি বিষয়টি আড়াল করার জন্য টাকা দিয়ে মিমাংসা করার কথা বলেন ঐ কর্মকর্তাকে। কিন্তু কর্মকর্তা টাকা দিতে রাজি হননি। মাইনুল অভিযোগ করেন সাংবাদিক বাকি ও তার বন্ধু যাবের তার সাথেও অশোভন আচরণ করেছে। 

অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা বরুণ কুমার দে বলেন, “আমি একটি কাজে আমার ঐ কলিগের বাসায় গিয়েছিলাম তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসে ছিলেন। আমি বাসাটিতে প্রবেশের পরই সাংবাদিক বাকি তার এক বন্ধুকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয় এবং আমার নামে অপবাদ দিতে থাকে। তারা ঐ বাসা তল্লাশি করে কাউকে পায়নি। ”

বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক বাকি বিল্লাহ বলেন, “এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।”