"প্রাণীর পাশেই ডাক্তার" এই থীম-কে ধারন করে প্রান্তিক খামারিদের দোরগোড়ায় আধুনিক ও জরুরি প্রাণিচিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেবার লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) হতে ১ম বারের মত গত ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে দেশের ৬১টি উপজেলাতে মােবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক (এমভিসি) প্রদান করা হয়।
দ্বিতীয় ধাপে ২১জুলাই ২০২২ তারিখে ২৯৯টি উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে একটি করে মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক (এমভিসি) প্রদান করা হয়। তৃতীয় ও
শেষ ধাপে আরও ১১৫টি এমভিসি অবশিষ্ট উপজেলাতে এমভিসি সোমবার ১৭ মার্চ ২০২৫ ইং তারিখে বিতরণ করা হয়। মহাখালীস্থ প্রাণিসম্পদ গবেষণা কেন্দ্র (এলআরআই) প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এমভিসিগুলো প্রদান করা হয়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ফরিদা আখতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মােবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিকগুলো হস্তান্তর করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মােঃ আবু সুফিয়ান।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, "প্রাণীর পাশে ডাক্তার"এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে অধিকাংশ উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ প্রাণিচিকিৎসা সেবার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
সোমবার ১৭ ই মার্চ ২০২৫ ইং ১১৫টি অবশিষ্ট এমভিসি প্রদানের মাধ্যমে দেশের সকল উপজেলাতে এমভিসি কার্যক্রম শুরু করবে।
দেশের হাজারাে খামারি ইতোেমধ্যে এর সুফল ভােগ করছেন। গবাদিপশু ও হীস-মুরগির দরুততম চিকিৎসা সেবা প্রদানে এমভিসিগুলো অপরিহার্য ভূমিকা
পালন করছে।
আমি দূঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, "নতুন সংযুক্ত ১১৫টি এমভিসি এই সেবাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং প্রাণিসম্পদ খাতে টেকসই পরিবর্তন আনবে। তবে, এমভিসির কার্যকারিতা ও দীর্ঘমেয়াদী সুফল নিশ্চিত করতে এর সঠিক ব্যবহার, টেকসই পরিচালনা ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য।"
আমাদের সকলকে একযাগে কাজ করতে হবে যেন এই মহতী উদ্যোগ দেশের প্রাণিসম্পদ খাতকে আরও সমৃদ্ধ করে
এবং খামারিদের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, এই এমভিসি গুলো সরকার তথা জনগণের ঋণের টাকায় কেনা, এগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
সেবাপ্রার্থীরা যাতে সন্তুষট হয় সেদিকে খেয়াল রেখে সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে। তিনি এমভিসির চালকদেরকেও অন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে স্ব স্ব দায়িত্ব পালনের আল্লান জানিয়ে বলেন, গাড়িগুলোকে নিজের সন্তানের মতা যত্ন করতে হবে, নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চালাতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মােঃ আবু সুফিয়ান বলেন, প্রাণিসম্পদ খাতের অগ্রযাত্রায় যান্ত্রিকীকরণ এক নবজাগরণর নাম। এর ফলশ্রুতিতে সেবার গতি ত্বরান্বিত হয়েছে, খামারির আস্থার জায়গা হয়েছে মজবুত। এরই এক উজ্ত্বল নিদর্শন মাবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক (এমভিসি) যা প্রাণিসম্পদ সেবায় এক বিপ্লব এনেছে। এমভিসির মাধ্যমে চিকিৎসা এখন অপেক্ষার নয়, সময়ের হাত ধরে এগিয়ে চলে গন্তব্যে। দ্রুততম সময় অসুস্থ প্রাণির কাছে পৌছে সেবাদান যেমন সম্ভব, তেমনি একসঙ্গে অগণিত খামার ও খামারির পরামর্শ ও
সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাচ্ছে।
এর ফলে ভুল চিকিৎসা কিংবা বিনা চিকিৎসায় গবাদিপশুর অকালমৃত্যু কমে আসবে, যা প্রাণিসম্পদ খাতকে আরও সমৃদ্ধ করবে। এই যুগান্তকারী উদ্যোগের ফলে দেশে উন্নত জাতের গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, হাস, মুরগি, কবুতর ও টার্কির চাষ বাড়বে।
খামার ব্যবস্থাপনা হবে আরও আধুনিক, মানসম্পন্ন পশুখাদ্যের ব্যবহার বাড়বে, এবং বিজ্ঞানসম্মত পরিচর্যার মাধ্যমে প্রাণিসম্পদের উৎপাদনশীলতা নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। প্রাণিসম্পদ খাতে এ ধরণের আধুনিক উদ্যোগ শুধু একটি প্রকল্প নয়, বরং এটি আমাদের আত্মনির্ভরতার পথে এক সাহসী পদক্ষপ| একসাথে কাজ করলে আমরা এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারবো, গড়ে তুলতে পারবো এক সুসংগঠিত, সমৃদ্ধ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ মােঃ বয়জার রহমান বলেন, মানুষকে সহজেই হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব, কিন্তু অসুস্থ ও
বৃহৎ আকৃতি গবাদিপশুকে পরিবহন করা অত্যন্ত দুরুহ কাজ। এ বাস্তবতাকে সামনে রেখে ভ্রাম্যমাণ প্রাণিচিকিৎসা ক্লিনিক (এমভিসি) চালু করা হয়েছে, যাতে চিকিৎসক ও প্রয়োেজনীয় চিকিৎসা সেবা সরাসরি অসুস্থ প্রাণীর কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। এটি নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ, যা প্রাণিসম্পদ খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী, ওষুধ, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয়
উপকরণে সজ্জিত এমভিসিগুলো প্রাণি স্বাস্থ্যে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধন করবে বলে আমি দূঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। নতুন সংযুক্ত ১৯৫টি এমভিসি এই সেবাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং প্রাণিসম্পদ খাতে টেকসই পরিবর্তন আনবে।
অনু্ঠানে আরা বক্তব্য রাখেন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডাঃ মােঃ জসিম উদ্দিন। এরপূর্বে এমভিসির ওপর নিমিত একটি টিভি বিজ্ঞাপন, একটি প্রামাণ্যচিত্র ও একটি সাফল্যগীথা প্রদর্শন করা হয়।মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদগ্তর, বিভিন্ন প্রকল্পের উ্তন কর্মকর্তা ও পরামর্শক, প্রাণিসম্পদ খাতের বিজ্ঞানী-গবেষক, উদ্যোক্তা এবং মােবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক গ্রহণকারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও চালকগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।