নিহতের মা রুমি আক্তার জানান, শাহীনের সাথে মিরার বিয়ে হয়েছে প্রায় ৭ বছর আগে। তাদের সংসারে দুই বছর ও ছয় মাস বয়সের দুই সন্তান রয়েছে।

পঞ্চগড়ের  দেবীগঞ্জে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার (১১ আগস্ট) উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের গাজকাটি এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ওই নারীর স্বামী শাহীন ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শাহীন ইসলাম একই এলাকার জয়নালের ছেলে। নিহত গৃহবধুর নাম তাসমিরা আক্তার মিরা (২২)। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের ঠাকুরগঞ্জ এলাকার মুছার মেয়ে। নিহতের মা রুমি আক্তার জানান, শাহীনের সাথে মিরার বিয়ে হয়েছে প্রায় ৭ বছর আগে। তাদের সংসারে দুই বছর ও ছয় মাস বয়সের দুই সন্তান রয়েছে।

বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন সময় তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য লেগে থাকতো। স্বামী-স্ত্রীর এই দ্বন্দ্বে শ্বশুরবাড়ির লোকজন ইন্ধন দিতো। মিরাকে ছোটখাট কারণে অথবা বিনা কারণেও প্রচুর মারধর করা হতো। এই নিয়ে একাধিকবার পারিবারিক ভাবে শালিস হয়। কিন্তু নির্যাতনের মাত্রা কমেনি। গত বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) সকাল ১০টায় মিরাকে তার স্বামী মারধর করলে সে বাড়ি থেকে বের হয়ে চিলাহাটি যায় বাবার বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে। এই সময় তার দুই সন্তানকে সাথে নিতে চাইলেও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাতে রাজি হননি। পরে তাসমিরার স্বামী শাহীন চিলাহাটিতে থাকা তার বোনকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানায়। তার বোন খবর পেয়ে চিলাহাটি থেকে বাসায় ফিরিয়ে আনে মিরাকে। বাসায় আসার পর মিরাকে আবারো মারধর করা হয়। শুক্রবার সকালেও তাকে মারধর করা হয়েছে বলে প্রতিবেশীর কাছে শুনেন তারা। পরিবারের দাবি, মিরাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলার পর দঁড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তার শরীরে একাধিক জায়গায় মারধরের চিহ্ন রয়েছে।

আঘাতের কারণে মিরার পা দিয়ে রক্ত ঝরছিল। পুলিশ সূত্র জানায়, শুক্রবার সকাল ৯ টায় খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এই সময় মিরাকে শোয়ার ঘরে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় পাওয়া যায়। শরীরে আঘাতের চিহ্ন ও রক্তক্ষরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সূত্রটি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলছিল মিরা আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু প্রতিবেশীরা গিয়ে মিরার পা মাটিতে লাগানো অবস্থায় দেখেছেন। প্রতিবেশীদের দাবি, মানুষ দাঁড়িয়ে থাকলে যে অবস্থায় থাকে মিরাকেও ঠিক একই অবস্থায় গলায় দঁড়ি দেওয়া অবস্থায় দেখেন তারা। দেবীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) রঞ্জু আহম্মেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান ওসি।