হাবিবুল আউয়াল বলেন, “নির্বাচনে কতগুলো সমস্যা শ্বাশত, যেমন ভোটে কালো টাকা ছড়ানো। এ ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার্থমূলক বা নিজের স্বার্থে যেটা করণীয় সেই পদক্ষেপগুলো আপনাদের নিতে হবে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ এবং সারা বিশ্ব এ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার-সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। আগামী ২৫ মের এই ভোটকে সামনে রেখে বুধবার দুপুরে গাজীপুরে আয়োজিত এক মতবিনিময়ে তিনি এ কথা বলেন। সিইসি বলেন, “বাংলাদেশের নির্বাচনের দিকে সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে। আমাদের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান কথা বলছে। জাতিসংঘও এ বিষয়ে কথা বলছে। কাজেই আসন্ন গাজীপুর সিটি নির্বাচনের গুরুত্ব আমাদের কাছে অত্যধিক। সভায় উপস্থিত সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এত বড় পরিসরে এ নির্বাচন জাতীয়ভাবে অনেক গুরুত্ব বহন করবে বলে আমরা মনে করি। শহরের আহসান উল্লাহ মাস্টার অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ওই মতবিনিময়ে সিটি নির্বাচনের প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। মতবিনিময়ে বেশ কয়েকজন প্রার্থী নানা অভিযোগ করেন। জবাবে সিইসি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শত-সহস্র সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়।

নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা তা নির্বাচন কমিশনের কাছে জানতে চান স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি, জাতীয় পার্টির এম এম নিয়াজ উদ্দিন এবং ইসলামী আন্দোলনের গাজী আতাউর রহমান। গাজী আতাউর রহমান নিজের বক্তব্যে অতীতের নির্বাচনের উদাহরণ টানেন। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হলে সিইসি পদত্যাগের ঘোষণা দেবেন কিনা, তাও জানতে চান তিনি। এ প্রশ্নের জবাব অবশ্য সিইসি দেননি। পরে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, “আপনারা রংপুরের নির্বাচনে দেখেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্ন হওয়ায় আমরা প্রথম দুতিন ঘণ্টা দেখেই নির্বাচনটি বাতিল করে দিয়েছিলাম। গাজীপুরের ক্ষেত্রে যদি একাধিকবার নির্বাচন বাতিল করতে হয়, একাধিকবার নির্বাচন বাতিল করা হবে। পরে আবার নির্বাচন করা হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য সবারই কিছু দায়িত্ব রয়েছে উল্লেখ করে এই কমিশনার বলেন, “সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা, রিটার্নিং কর্মকর্তা, পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা–সবাই মিলে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। কেননা এই নির্বাচনের দিকে শুধু দেশের মানুষ নয়, সারাবিশ্ব তাকিয়ে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও এই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

এ সময় হাবিবুল আউয়াল বলেন, “নির্বাচনে কতগুলো সমস্যা শ্বাশত, যেমন ভোটে কালো টাকা ছড়ানো। এ ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার্থমূলক বা নিজের স্বার্থে যেটা করণীয় সেই পদক্ষেপগুলো আপনাদের নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে শত-সহস্র সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। “মাঠে খেলা হলে দুই পক্ষকেই খেলতে হয়। কেউ যদি কালো টাকা বিতরণ করে থাকে, আরেকজনকে যতদূর সম্ভব তা প্রতিহত করার চেষ্টা করতে হবে। নির্বাচন কমিশন কিংবা পুলিশের পক্ষে সবসময় এসব প্রতিহত করা সম্ভব নাও হতে পারে। এ জন্য সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে।” বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় এখনও অনেক অপসংস্কৃতি-কালো সংস্কৃতি রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন সিইসি। তিনি বলেন, “এই কালো সংস্কৃতি থেকে আমাদের ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যা কিছু করণীয়, যতটুকু আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে থাকবে তা করা হবে।

আমাদের আন্তরিকতা ও চেষ্টার কোনো অভাব থাকবে না।” তবে পুলিশ ও প্রশাসনের সহায়তা ছাড়া নির্বাচন কমিশন এককভাবে তেমন কিছু করতে পারবে না বলেও মনে করেন সিইসি। তিনি বলেন, “এটা যেহেতু মেট্রোপলিটন এলাকা, এখানে পুলিশ প্রশাসনের গুরুত্ব জেলা পুলিশের চেয়ে বেশি। বেশ কিছু বিচারিক ক্ষমতা পুলিশ কমিশনার ও মহানগর পুলিশ কর্মকর্তাদের রয়েছে। আমি আশা করব সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে প্রয়োজন অনুযায়ী তারা সেগুলো ব্যবহার করবেন। মত বিনিময়ে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম, গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান, ইসি সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম, গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম।