প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে প্রবাসীর স্ত্রীকে বিয়ে করে পরিবারের পরামর্শে গাঢাকা দিয়েছে লম্পট প্রেমিক। সর্বোস্য হারিয়ে কালুখালী বিজ্ঞ আমলী আদালতে ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের বড়ইচারা গ্রামের ইসলাম মন্ডলের ছেলে মোহাম্মদ হৃদয় হোসাইনকে আাসামী করে, রাজবাড়ী সদর বিজ্ঞ পারিবারিক জজ আদালতে দেনমোহর ও খোরপোষের দাবীতে ইসলাম মন্ডলের ছেলে মোহাম্মদ হৃদয় হোসেন ও মৃত লাল চাঁদ মন্ডলের ছেলে ইসলাম মন্ডলকে বিবাদী করে নালিশী মামলা এবং রাজবাড়ী বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে ইসলাম মন্ডলের ছেলে মোহাম্মদ হৃদয় হোসাইন (২৩), মৃত লাল চাঁদ মন্ডলের ছেলে ইসলাম মন্ডল (৫৫), ইসলাম মন্ডলের স্ত্রী মোছাঃ মরিয়ম খাতুন (৪৫) ও মেয়ে মোছাঃ লিপি খাতুন (২৬)কে আসামী করে ২০১৮ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (গ)/৩০ ধারার মামলাসহ মোট ৩টি মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী নারী।
প্রতারণার স্বীকার নারী (২৭) সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের নীমতলা গ্রামের মোঃ বাচ্চু শেখের মেয়ে।
মামলা সুত্রে জানা যায়, গত ২০২১ সালে পারিবারিক ভাবে কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের বড়ইচারা গ্রামের সৌদী প্রবাসী আনিচুর রহমানের সাথে বিয়ে হয় ঐ নারীর। তাদের দাম্পত্য জীবনে ২টি সন্তনের জন্ম হয়। এরমধ্যে সাংসারিক প্রয়োজনে আনিচুর সৌদী আরবে কাজের জন্য চলে গেলে একই এলাকার হৃদয় হোসাইনের নজর পড়ে প্রবাসীর স্ত্রীর উপর। কারণে অকাণে তার বাড়ীতে গিয়ে বিভিন্নভাবে ফুঁসলাইতে থাকে। একপর্যায়ে তার প্রেমে পড়ে যায় ঐ নারী। নারীকে নিজের করে পেতে গত ৭ জানুয়ারী শরা শরিয়ত মোতাবেক ১০ লাখ টাকা দেনহোহরে হলফনামা ও কাবিন রেজিস্ট্রির মাধ্যমে বিয়ে করে হৃদয়। এবং ৮ জানুয়ারী হৃদয়ের বাড়ীর লোকজনের পরামর্শে ৩ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ প্রয়োগ করে। টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাকে বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দেয়। পরে হৃদয়ের বাড়ী থেকে বউকে ফিরিয়ে নিতে এবং যৌতুকের টাকার জন্য এসে টাকা না পেয়ে মারধর করে তার বাবার বাড়ীতে ফেলে রেখে গেলে গত ২ ফেব্রুয়ারি আাদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগী।
পারিবারিক আদালতে মামলা সুত্রে জানা গেছে, ১০ লাখ টাকা দেনমোহর ও ১ লাখ টাকা ওয়াশিলে ঐনারীর বিয়ে হয় হৃদয় হোসাইনের সাথে। এরপর হৃদয় হোসাইন তার বাবা-মা'র পরামর্শ মোতাবেক গাঢাকা দিলে তার বাড়ীর অন্যান্য সদস্যরা মারপিট করে তাড়িয়ে দিলে সে দেনমোহরের ৯ লাখ এবং প্রতি মাসে ৮ হাজার টাকা খোরপোষের দাবীতে মামলা দায়ের করেছে।
ভুক্তভোগী ঐ নারী জানায়, ২০২১ সালে পারিবারিকভাবে আমার বিয়ে হয় কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের বড়ইচারা গ্রামের আনিচুর রহমানের সাথে। আমাদের সুখি দাম্পত্য জীবনে একটি ছেলে একটি মেয়ে জন্মগ্রহণ করে। এরমধ্যে সাংসারিক প্রয়োজনে আনিচুর সৌদি আরবে পাড়ি জমায়। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের নিয়ে একা থাকার সুযোগে একই গ্রামের হৃদয় হোসাইন আমাকে উত্যক্ত করতে থাকে। এমনকি বিভিন্নভাবে কু-প্রস্তাব দিতে থাকে। আমি অনেক বোঝানোর চেষ্টা করাসহ গালিগালাজও করেছি। এতে করে সে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। কোনভাবে তার প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। ধীরে ধীরে আমিও তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি। এই সুযোগে হৃদয় আমার নিকট থেকে কয়েক দফায় নগদ ১ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা ও স্বর্ণের ১টা চেইন, ১টা লকেট, ৩টা আংটি আনুমানিক মুল্য দেড় লক্ষ টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেয়। এরপর গত ৭ জানুয়ারি অনুশাসন মেনে ইসলামি শরা-শরিয়ত মোতাবেক রেজিষ্ট্রি কাবিননামা ও নোটারী পাবলিক এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে করে। এরপর তাদের বাড়ীতে নিয়ে আসে। এসময় হৃদয়ের বাবা, মা, বোনসহ অন্যরা ঘরের ভেতর ফেলে আমার উপর প্রচন্ডভাবে শারীরিক নির্যাতন চালায়। আমি কোন রকমে প্রাণ নিয়ে ফিরে এসে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করি। এরা আমার নিকট ৩ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী, শারীরিক নির্যাতন, বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দেওয়াসহ খোরপোষ দেওয়া থেকেও বিরত রয়েছে। আমি এলাকায় বিচার না পেয়ে কালুখালী থানায় লিখিত অভিযোগ করি। তাতেও কোন ফল না পেয়ে স্বামী সংসার ফিরে পেতে রাজবাড়ী আদালতে মামলা করেছি। আমি আমার সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের সুষ্ঠ বিচার দাবী করছি।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে এক প্রতিবেশী জানান, ঐ মেয়েটি হৃদয়ের বাড়ীতে এসেছিল। হৃদয়ের বাড়ীর লোকজন জোর করে তাড়িয়ে দিলে রাতে পাশের একটি বাড়ীতে থেকে চলে যায়।
এবিষয়ে হৃদয়ের বাড়ী গেলে একটি মেয়ে জানায়, লোকমুখে শুনেছি হৃদয় একজনের বউকে বিয়ে করেছে। তবে কোন কাগজপত্র দেখিনি। হৃদয় ছোট মানুষ তাকে ফাঁসানো হয়েছে। হৃদয় কোনদিন তার কাছ থেকে টাকা স্বর্ণের জিনিস নিয়েছে এমনটা শুনি নাই।
হৃদয়ের মা মোছাঃ মরিয়ম খাতুন বলেন, আমার ছেলে ছোট। এখনো বিয়ের বয়স হয়নি। আর সে বিয়ে করলে আমরা অবশ্যই জানতাম। হৃদয় ঐ বাড়ীতে যেতো কিনা তাও জানিনা। স্ত্রীর দাবী করা মেয়ে আমাদের বাড়ীতে কোনদিনই আসেনি। যেহেতু সে আমাদের বাড়ী আসেনি, মারপিটের কোন ঘটনাও ঘটেনি। হৃদয় কোথায় আছে এখন বলতে পারছি না।