রাজবাড়ীর পাংশায় ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। এখানে চিকিৎসক ছাড়াও রয়েছে অন্যান্য পদের কর্মচারী সংকট।
পাংশা উপজেলার প্রায় ৩ লাখ জনবসতির চিকিৎসা সেবার বড় ভরসা এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। বিবিধ সমস্যার কারণে এটিই আজ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। চিকিৎসক ও জনবল নিয়োগ না থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। এতে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার সাধারণ মানুষ। চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা ভুক্তভোগীরা।
সরকারি নিয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসক ও জনবল সংকট কাটবে বলে মনে করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনুমোদিত চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩১ টি। এর মধ্যে ১৭টি পদই শূন্য রয়েছে। কর্মরত রয়েছেন ১৪ জন। তার মধ্যে থেকেও আবার ৪ জন চিকিৎসক ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মীর ৩টি পদ থাকলেও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কাজ করছে ২ জন, আয়ার ২টি পদে আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত ২ জন। পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় দীর্ঘদিন ধরে মেডিসিন, কার্ডিওলজি, অর্থপেডিক্স, সার্জারি, ইএনটি, অপথোমেলোজি, চর্ম ও যৌন রোগের জুনিয়র কনসালটেন্ট নেই। টেকনিশিয়ান ও অপারেটরের অভাবে পড়ে আছে এক্স-রে মেশিনটি। চিকিৎসক ও জনবল সংকট থাকায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে রোগীদের অন্যান্য সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মরত চিকিৎসক ও সেবিকাদের। বর্তমানে জরুরী রোগী আনা নেওয়া করার জন্য থাকা অ্যাম্বুলেন্সের চালক পদটিও শূন্য রয়েছে। একারণে উপজেলাবাসী বঞ্চিত হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকে।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সরেজমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহিঃর্বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভিড়। চিকিৎসা সেবা নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই তাদের। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। চিকিৎসক সংকটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও রোগীরা হচ্ছেন কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত। কমপ্লেক্সের বহিঃর্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। মাত্র ৪ জন চিকিৎসক বহিঃর্বিভাগে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দেন! যেকারণে আগত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়।
চিকিৎসক সংকটে অতিরিক্ত চাপ নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে তাদের। এ ব্যাপারে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ এবাদত হোসেন জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল সংকট রয়েছে। এতে সমস্যা তো হচ্ছেই। শতভাগ ইচ্ছা থাকলেও অতিরিক্ত চাপ ও দায়িত্ব নিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন শূন্যপদে চিকিৎসক, অ্যাম্বুলেন্স চালক, টেকনিশিয়ান ও অপারেটরদের চাহিদা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে পাঠানো হয়েছে। সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শীঘ্রই চিকিৎসক ও জনবল সংকটের সমস্যা সমাধান হবে বলে আশা করি।
তিনি আরো বলেন, আমি যোগদানের পর থেকেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির চিকিৎসার মান উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করছি। সংকট কেটে গেলে এখানে মানসম্মত চিকিৎসা সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।